লাইফস্টাইলহেলথ

সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ

সব সময় জ্বর জ্বর ভাব লেগেই থাকছে? ছোটোখাটো জ্বরের পিছনে অন্যকোনো মারাত্মক রোগ বাসা বাধেনিতো? চলুন তবে আজ জেনে নিই সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ।

বছরে দুএকবার জ্বরে আক্রন্ত হয় না এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। জ্বর আমাদের অতি পরিচিত এক অসুস্থতার নাম। বছরের বিভিন্ন সময়ে আমরা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকি। অনেক সময় তো বছরে ৩/৪ বার পর্যন্তও জ্বরে আক্রান্ত হই। আবার আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা সব সময়ই জ্বর জ্বর ভাব অনুভব করেন। আজকের লেখাটা মূলত তাদের জন্যেই। আজ আমরা জানবো সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ ? এবং এমন অবস্থায় কি করণীয়।

ডাক্তারদের মতে জ্বর নিজে আসলে কোনো রোগ নয়। বরং জ্বর অন্য বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। একটু সহজ করে বলতে গেলে কথাটা অনেকটা এমন হয় – “আমাদের সবার শরীরেরই একটা নিজেস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, আমাদের শরীর যখন কোনো জীবাণু বা রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন শরীর নিজেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে আক্রমনকৃত জীবাণু বা  রোগের সাথে লড়াই করে।

সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ আর শরীরের এই বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রাকেই আমরা জ্বর হিসেবে জানি।” জ্বর যেমন বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে তেমনি বিভিন্ন ধরনেরও হয়ে থাকে। বিভিন্ন লক্ষণ ও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তাররা জ্বরের ধরন নির্ধারন পূর্বক চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। সব সময় জ্বর জ্বর ভাব  মানেই হচ্ছে শরীরে কোনো রোগ বাসা বেধেছে কিনবা বাসা বাধার চেষ্টা করছে। যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, মূত্রনালির বা মূত্রথলির সংক্রামনসহ বিভিন্ন জটিল রোগের লক্ষন হিসেবে শরীরে সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে।

সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ ?
সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ ?

 সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ

  •         যক্ষ্মাঃ যক্ষ্মা রোগের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে প্রায়ই জ্বর জ্বর ভাব বা হালকা জ্বর সাথে বুকে ব্যথা ও কাশি, শ্বাসকষ্ট। অনেক সময় আবার থুথু বা কাশির সাথে রক্তও আসে। তাই শরীরে সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকলে ডাক্তার দেখানো উচিৎ। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্নয় করে চিকিৎসা করবেন। সময় মতো ও সঠিক চিকিৎসা করলে যক্ষ্মা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
  •         মূত্রথলির সংক্রমণঃ সব সময় জ্বর জ্বর ভাব মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণের কারণও হতে পারে। জ্বরের সাথে তলপেটে ব্যথা ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করলে ধরে নিতে হবে মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণ হয়েছে। এক্ষেত্রে শরীরে বার বার জ্বর আসতে পারে। জ্বরের ঔষুধ খেলে জ্বর কমে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে আবার জ্বর আসবে। সব সময়ের এই জ্বর জ্বর ভাব সেই পর্যন্ত ঠিক হবে না যতক্ষন না ডাক্তার দেখিয়ে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের পূর্বক মূত্রনালি বা মূত্রথলির সংক্রমণের চিকিৎসা করা হবে।

জ্বর না কমার কারণ

 

  •         ম্যালেরিয়াঃ ম্যালেরিয়া রোগের অন্যতম লক্ষন হচ্ছে শীত শীত অনুভূত হওয়া ও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও জ্বর দীর্ঘ মেয়াদী হতে পারে ফলে সব সময় জ্বর জ্বর ভাব অনুভূত হতে পারে। যদিও ম্যালেরিয়ার প্রথম দিকে জ্বর থাকে না সেই সময় অনেকে বুঝতেই পারে না সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ফলে ম্যালেরিয়া ২য় পর্যায়ে চলে যায়। শীত শীত অনুভূত হওয়া ও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা মূলত ২য় পর্যায়ের ম্যালেরিয়ারই লক্ষণ। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিৎ। সাধারণ জ্বরের ঔষুধে এই এই সব সময় জ্বর জ্বর ভাব দূর হবে না। এ জ্বর থেকে মুক্তির জন্যে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করতে হবে.
  •         কালাজ্বরঃ কালাজ্বর এর লক্ষণগুলির মধ্যে বার বার জ্বর আসা অন্যতম। তাই বলা যায় সব সময় জ্বর জ্বর ভাব ভয়াবহ কালাজ্বরের কারণেও হতে পারে। কালা জ্বরের অন্যান্য লক্ষণগুলি হলো- ক্ষুদা মন্দা, রক্ত শূন্যতা, ওজন কমে যাওয়া, অবসাদগ্রস্থ থাকা, যকৃৎ ও প্লীহার আকার বেড়ে যাওয়া ইত্যাদী। কালাজ্বর একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগের কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেহেতু বার বার জ্বর আসা কালাজ্বরের লক্ষণও হতে পারে। তাই সব সময় জ্বর জ্বর অনুভূত হলে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার দেখানো উচিৎ।

জ্বর ও বমি হলে করণীয়

 

  •         বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর সংক্রমণঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে গেলে বিভিন্ন রোগ জীবাণু সহজেই আক্রমণ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর সংক্রমণের ফলে দীর্ঘমেয়াদী জ্বর হতে পারে অর্থাৎ সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে। এক্ষেত্রেও ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নেয়া উচিৎ।
  •         ক্যান্সারঃ মরণব্যাধি ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণও এই জ্বর জ্বর ভাব। তাই সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে যাতে ডাক্তার সঠিক রোগ নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন। সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ
  •         গোদরোগঃ গোদরোগ একটি ভয়াবহ রোগ। এ রোগের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে এ রোগ অ্যাডভান্স ষ্টেজের আগে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। এ রোগের বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে প্রচুর জ্বর ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া অন্যতম। গোদরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ। কারন দিন দিন ক্রমান্বয়ে এ রোগের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে। গোদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যেন অন্য সুস্থ্য কোনো মানুষের সংক্রামণের কারণ না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  •         দূর্বল ইমিউন সিস্টেমঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে পরলে শরীরে সহজেই যে কোনো রোগ জীবনু আক্রমন করে শরীরকে দূর্বল করে ফেলতে পারে। ফলে অবসাদ, দূর্বল অনুভব করা, সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে। আমরা অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছে মতো এন্টিবয়োটি গ্রহন করে থাকি, আবার অনেক সময় এন্টিবায়োটিক এর সম্পূন্ন কোর্স শেষ না করেই এন্টিবায়োটিক নেয়া বন্ধ করে দেই এ ধরনের অভ্যাস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে নষ্ট করে দেয়। ফলে পরবর্তীতে ঐসব এন্টিবায়োটিক আর রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না । সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ
সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ ?
সব সময় জ্বর জ্বর ভাব কিসের লক্ষণ ?

সব সময় জ্বর জ্বর ভাবের প্রতিরোধ ও প্রতিকার

সব সময় জ্বর জ্বর ভাব মানেই শরীরে বড় কোনো রোগ বাসা বাধছে বা বাধার চেষ্টা করছে। আর শরীরে রোগ তখনই সহজে বাসা বাধতে পারে যখন আমরা অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকি, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই আর এমন সব কাজ করি যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই সুস্থ্য সবল থাকতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে হবে, সুষম খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি খেতে হবে, সময় মতো ঘুমাতে হবে।

বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার

 

সব সময় জ্বর জ্বর ভাব যেহেতু জটিল বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমম- যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ক্যান্সারসহ আরোও বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবেই এই জ্বর দেখা দিতে পারে। এ ধরনের জ্বর সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদী হয়ে থাকে কারণ রোগের সঠিক চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত এই জ্বর ঠিক হয় না। তাই সব সময় জ্বর জ্বর ভাব ব্যপারটিকে হালকা ভাবে নেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্যে আগে সমস্যা চিহ্নিত করাটা জরুরী। তাই আগে সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতে হবে এতে চিকিৎসা কার্যকর ও ফলপ্রসু হবে। সঠিক রোগ নির্ণয়ের পর উক্ত রোগের চিকিৎসা হলেই সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

তথ্য সমন্বয় : উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button