গরুর জ্বর মাপার নিয়ম
সাধারনত শরীরের তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে আমরা তাকে জ্বর বলি। মানুষেরও যেমন জ্বর হয় তেমনি জ্বর হতে পারে গবাদি পশুদেরও। যে কোনো প্রাণিই অসুস্থ্য হলে অসুস্থ্যতা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা উচিৎ। আমাদের অনেকের বাসায়ই গৃহপালিত গবাদি পশু রয়েছে তাছাড়া অনেকে তো আবার গবাদি পশুর খামারও করে থাকেন। এসব গবাদি পশু থেকে ভালো ফলাফল লাভের জন্যে তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরী। যেহেতু আমাদের অনেকের বাসায়ই গরু রয়েছে তাই আমাদের জেনে রাখা উচিৎ গরুর জ্বর মাপার নিয়ম। তাই আজ আলোচনা করবো গরুর জ্বর মাপার নিয়ম সম্পর্কে যাতে এখন থেকে আপনি নিজেই আপনার গরুর জ্বর পরিমাপ করতে পারেন।
গরুর জ্বর মাপার প্রস্তুতি হিসেবে যে সব কাজ করতে হবে তা হলো-
- গরুকে শান্ত একটা পরিবেশে নিয়ে যেতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত ছায়া থাকবে। গরু যেন সেখানে বিশ্রাম নিতে পারবে। পরিশ্রম করার পর গরুর দেহের তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে তাই সঠিক তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্যে তাপমাত্রা পরিমাপের পূর্বে গরুরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। প্রখর রোদ বা বৃষ্টিতে থাকা অবস্থায় গরুর দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করা যাবে না। কারণ এতে গরুর দেহের সঠিক তাপমাত্রা পাওয়া যাবে না।
- গরু উত্তেজিত অবস্থায় থাকলে সঠিক তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায় না। উত্তেজিত অবস্থায় সঠিক তাপমাত্রা নির্ণয় করা যাবে না। তাই সঠিক তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্যে তাপমাত্রা পরিমাপের পূর্বে গরুকে শান্ত করে নিতে হবে।
- পরিশ্রমের কোনো কাজ যেমন দীর্ঘসময় হাটা বা দৌড়ানোর পর দেহের তাপমাত্রা নিলে সঠিক তাপমাত্রা পাওয়া যাবে না তাই পরিশ্রমের পর সাথে সাথেই তাপমাত্রা মাপা যাবে না। পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিয়ে তারপর তাপমাত্রা পরিমাপ করা উচিৎ না হলে সঠিক তাপমাত্রা পাওয়া যাবে না।
গরুর জ্বর মাপার নিয়ম
গরুর শরীরের বাহ্যিক তাপমাত্রা অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা অপেক্ষা অনেক কম থাকে তাই গরুর জ্বর মাপার ক্ষেত্রে গরুর দেহের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হয়। গবাদি পশুর তাপমাত্রা পরিমাপের জন্যে বাজারে বিভিন্ন ধরনের গবাদি পশুর থার্মোমিটার পাওয়া যায়। গরুর জ্বর মাপার জন্যে প্রথমেই একটা থার্মোমিটার নিয়ে নিতে হবে। তারপর থার্মোমিটারটিকে হেক্সাসল বা স্যাভলন জাতীয় কোনো জীবাণুনাশক নিয়ে জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে। তারপর সাবধানে থার্মোমিটারটিকে গরুর মলাদ্বারে প্রবেশ করাতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে গরুকে উত্তেজিত বা বিরক্ত করা যাবে না যথা সম্ভব ধীরে ধীরে কাজটি করতে হবে। এক্ষত্রে প্রয়োজন অনুসারে থার্মোমিটারটি মলাদ্বারে প্রবেশ করানোর সময় তাতে পেট্রোলিয়াম জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। থার্মোমিটার টি যদি ডিজিটাল হয় থাকে থার্মোমিটারটি শব্দ না করা পর্যন্ত থার্মোমিটারটি মলাদ্বারের ভেতর রাখতে হবে আর সাধারণ থার্মোমিটার হলে ১ মিনিট মলাদ্বারে রেখে তারপর বের করতে হবে। বের করার পর থার্মোমিটারটি দেখে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে।
গরুর দেহের আদর্শ তাপমাত্রা ও জ্বর নির্ণয় প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর- ৩৭.২-৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০.০ – ১০২.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। বাছুরের ক্ষেত্রে- ৮.৮ – ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০১.৫ – ১০৩.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।গরুর জ্বর মাপার নিয়ম
প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর ক্ষেত্রে গরুর তাপমাত্রা যদি ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০২.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে গরুটি জ্বরে আক্রান্ত। অন্যদিকে বাছুরের তাপমাত্রা সাধারনত প্রাপ্ত বয়স্ক গরু থেকে বেশি হয়ে থাকে। তাই বাছুরের ক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৩.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হলে তাকে জ্বর হিসেবে শনাক্ত করতে হবে। দেহের অধিক তাপমাত্রা ছাড়াও জ্বর হলে গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয় তাছাড়া কাপুনিও হতে পারে। জ্বরের প্রয়োজনীর চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।গরুর জ্বর মাপার নিয়ম
বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার
জ্বর ছাড়াও যেসব ক্ষেত্রে গরুর দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারেঃ
জ্বর ছাড়াও বিভিন্ন কারনে গরুর দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে। যেমন-
- গরুর ডাক আসলে বা গরম হলে দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে।
- গর্ভকালের শেষের দিকে সাধারনত গরুর দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
- খাদ্য গ্রহণের পর দেহের তাপমাত্রা বাড়ে যা পানি পানে কমে যায়।
- পরিশ্রম করার পর দেখের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
- প্রাপ্তন বয়স্ক গরু অপেক্ষা বাছুরের দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
- সকালের দিকে গরুর দেহের তাপমাত্রা কম থাকে, দিনের শেষের দিকে যা বেড়ে যায়।
গরুর জ্বর হলে করণীয়ঃ
জ্বর হলে গরুকে ছায়া জায়গায় রাখতে হবে। জ্বরের সময় গরুকে পর্যপ্ত বিশ্রামেও রাখতে হবে। প্রয়োজন বোধে গরুর মাথায় পানি দেয়া যেতে পারে। তবে পানি দেয়ার পর অবশ্যই মাথা ভালো করে মুছে দিতে হবে। যেহেতু জ্বরের সময় গরুর দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকে তাই এ সময় গরুর দেহে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে, তাই পানি শূন্যতা রোধে গরুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষুধ খাওয়াতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ইঞ্জেকশন দেয়া যেতে পারে।