গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা
Table of Contents
গোল্ড ফেসিয়াল-স্বর্ণালী সৌন্দর্য
বলা হয়ে থাকে যত রকম রত্নই আবিষ্কার হোক না কেন,খাঁটি সোনা সেরার সেরা।সোনার
ব্যবহার সাধারণত গয়নাতেই আমরা বেশি দেখি। হালেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি বিন্দুমাত্র।
কিন্তু তাই বলে স্বর্ণালী রূপচর্চা? প্রিয় পাঠক,২৪ ক্যারেটের খাঁটি সোনার গুঁড়ো দিয়ে রূপচর্চা করা কিন্তু যে
সে কথা নয়।শুধু কি ঠাঁটবাঁট বজায় রাখতেই গোল্ড ফেসিয়াল? না,তা নয়।গোল্ড ফেসিয়ালের আছে প্রচুর
উপকারিতা। সেই উপকারিতার খাতিরেই এই ফেসিয়ালের এত জনপ্রিয়তা। প্রথমে গোল্ড ফেসিয়াল নিয়ে কিছু
প্রাথমিক ধারণা দেয়া যাক-
গোল্ড ফেসিয়াল কী?
— মধু,চন্দন,জাফরান,গোলাপজল,ঘৃতকুমারীর সাথে ২৪ ক্যারেট গোল্ড এর চমৎকার কম্বিনেশন এই গোল্ড
ফেসিয়াল। প্রাচীনকালে রাণী-রাজকুমারীরা সোনার নির্যাসে রূপচর্চা করতে পছন্দ করতেন।তারপর দেখা গেলো
এই গোল্ড ব্যাপারটাতেই জাদু আছে।প্রাচীনকালের সে চলের বর্তমান রুপ হলো গোল্ড ফেসিয়াল।
গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা
কেন গোল্ড ফেসিয়াল করবেন?উপকারিতা যদি না ই থাকে তাহলে নিশ্চয়ই খরচা করে এসব করার মানে নেই।
তবে এ ফেসিয়াল নিয়ম মেনে করলে আপনি ঠকবেন না আর যাই হোক।
উপকারিতা গুলো প্রথমে শুনে নিন। এরপর সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তী বিশদে যাবেন কী না।
● এন্টি এজিং : আমাদের জেনারেশনের মানুষেরা একটা সমস্যায় প্রায় সবাই ভুগছেন।তা হলো স্কিনে
অকাল বার্ধক্যের ছাপ। ত্বকের টানটান ভাব সরে যাচ্ছে।বলিরেখা দেখা দিচ্ছে।বয়সের সাথে চেহারার
গ্লো এর কোনো মিল নেই।সৌন্দর্য একটা মানুষের আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। কিন্তু অল্প বয়সেই যদি
আমরা বুড়িয়ে যাই তাহলে আমাদের চিন্তাচেতনার কী হবে?নিজেকে সবথেকে বেশি কনফিডেন্ট রাখতে
প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করে যেতে হবে।স্কিন তার ব্যতিক্রম নয়।গোল্ড ফেসিয়ালে থাকা
উপাদানগুলোর প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো আপনার স্কিন এজিং নিয়ন্ত্রণে আনা।সোনা যেমন যুগ
যুগ ধরে পুরোনো হয় না,একই রকম আবেদন থাকে।তেমনি আপনাকেও সতেজ রাখতে কাজ করে এই
ফেসিয়াল।
● ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি : গোল্ড ফেসিয়ালে থাকা গোল্ড ডাস্টে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।এগুলো
যখন স্কিনের ভেতর প্রবেশ করে স্কিন টিস্যু প্রাণ ফিরে পায়।
গোল্ড ফেসিয়ালের একটা বড় সময় যায় ম্যাসাজ এ।ছোটবেলায় দাদি নানিরা সরষের তেল দিয়ে
বাচ্চাদের শরীর ম্যাসাজ করতে বলতেন।মূলত রক্ত সঞ্চালন বোঝাতে এটা বলা হতো।আপনারা
নিশ্চয়ই জানেন স্কিন হলো পুরো দেহের মধ্যে সবচেয়ে বড় অঙ্গ। তার মধ্যে মুখের স্কিন সবচেয়ে
বেশি চোখে পড়ে।সবচেয়ে বেশি ধুলোবালি থেকে শুরু করে দূষণ মুখের স্কিনেরই মোকাবেলা করতে হয়।
গোল্ড ফেসিয়াল করলে ম্যাসাজের ফলে স্কিনে রক্ত সঞ্চালন হয়।ফলে ত্বকের মেলানিন এক
জায়গায় জমা বন্ধ হয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ও ত্বকে বাড়তি গ্লো আনে।
● এলার্জির প্রতিষেধক: ধারণা করা হয় গোল্ড ফেসিয়ালে থাকা গোল্ড ডাস্ট এলার্জি প্রতিরোধ
করে।প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। সৌন্দর্যের শিরোমণি মহারাণী ক্লিওপেট্রার
রূপচর্চাতেও গোল্ড মাস্ক বা সোনায় বানানো ফেসমাস্ক ব্যবহারের নজির দেখা গিয়েছে।
● আল্ট্রা ভায়োলেট রে প্রতিরোধক: গরমকাল হোক কিংবা শীতকাল,সূর্য থেকে আসা আল্ট্রা
ভায়োলেন্ট রে সবসময় ই ক্ষতিকর।মেলানিন তৈরি বাড়িয়ে দিয়ে এটি স্কিনের রঙ কালো করে
ফেলে।সানট্যান বা রোদে পোড়া ভাব দেখা দেয়।আল্ট্রা ভায়োলেট রে থেকে ক্যান্সার অব্দি হতে
পারে।গোল্ড ফেসিয়ালে থাকা উপাদান আল্ট্রা ভায়োলেট রে থেকে হওয়া ক্ষতিগুলো ঠিক করে দেয়
স্কিনের নতুন টিস্যু পুননির্মাণ করে। তাছাড়া মেলানিন প্রোডাকশনও কমিয়ে থাকে।
● গোল্ডে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান আছে।তাই র্যাশ অথবা ব্রণের সমস্যা থাকলে চিন্তার কিছু
নেই। মাইল্ড স্ক্রাব করে পুরো ফেসিয়াল সম্পন্ন করতে পারবেন সাধারণ নিয়মেই।ত্বক যদি
প্রাণহীন লাগে তাহলে গোল্ড ফেসিয়াল খুব ভালো সমাধান। স্কিনের সাথে জড়িত সব শিরা
উপশিরা,পেশি,কোষকে সমান ভাবে উদ্দীপ্ত করে স্কিনকে সতেজ দেখায় গোল্ড ফেসিয়াল। দাগছোপের
সমস্যাও একটি সাধারণ সমস্যা। নিয়মিত গোল্ড ফেসিয়াল করলে দাগছোপ হালকা হয়ে আসবে।সেই
সাথে বেসিক স্কিন কেয়ারও চালিয়ে যেতে হবে।
● ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে নরম এবং মসৃণ করে তোলে।সুস্থতা কিন্তু নমনীয়তাতেও প্রকাশিত
হয়।
উপকারিতাগুলো জানার পর পরবর্তী অংশ পড়তে ইচ্ছে করবেই!
গোল্ড ফেসিয়াল করতে কী কী লাগে
গোল্ড ফেসিয়াল করতে শুধু প্রোপার একটা কিট হলেই হয়।কিন্তু সবসময় তাতো হাতের নাগালে আমরা পাবো
না। প্রত্যেক ফেসিয়ালেই যেহেতু সাধারণ ধাপ ৩ টি তাই আমরা চতুর্থ ধাপ অর্থাৎ ফেসপ্যাক অংশে কী কী
লাগে সেটা আপনাদেরকে জানাবো।গোল্ড ফেসিয়াল করতে কী কী লাগে……
ফেসপ্যাক রেসিপি-১
● হলুদ গুঁড়ো – ১.৫ চা চামচ
● গোলাপজল-২ চা চামচ
● বেসন-১ চা চামচ
● দুধ – ৪ ড্রপ
ফেসপ্যাক রেসিপি-২
● হলুদ গুঁড়ো- ২ চা চামচ
● আলুর রস- ৪ চা চামচ
● চালের গুঁড়ো- ১ চা চামচ
ফেসপ্যাক রেসিপি-৩
● হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
● এলোভেরা জেল-পরিমাণমতো
● মুলতানি মাটি-পরিমাণমতো
এগুলো প্রত্যেকটিই DIY বা ঘরোয়া উপায়ে চটজলদি বানানোর মতো ফেসপ্যাক। প্রত্যেকটি ফেসপ্যাক
ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে উপাদানগুলো মেশানো। ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাচ টেস্ট করে ব্যবহার করা।এরপর ১০-১৫
মিনিট পর পরিষ্কার করে ফেলা।
গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম
যেকোনো ফেসিয়াল করতেই মোট ৪ টি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। সেগুলো হলো ক্লিনজিং,স্ক্রাবিং,স্টিমিং এবং
সবশেষে ফেসপ্যাক। গোল্ড ফেসিয়ালও এর ব্যতিক্রম না।
গোল্ড ফেসিয়াল পার্লারে করতে হলে মূলত তারা একটি কিটের সহায়তা নেন। এই কিটে গোল্ড যুক্ত ফেসিয়াল
ক্লিনজার,স্ক্রাব,অয়েল,ফেসপ্যাক থাকে এবং সবশেষে থাকে একটি ট্রিটমেন্ট। গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম…
বাজারে গোল্ড ফেসিয়ালের কিট পাবেন।
তবে সে কিটের ব্যবহারবিধি বা উপাদান কতটা ভালো তা নিশ্চয়ই মোড়ক
দেখে বোঝা সম্ভব না।আর সবার পক্ষে ব্র্যান্ডের কিট ব্যবহার করা সম্ভবও হয় না
তাই ঘরোয়া উপায়ে বাসায় বসেই করতে পারেন গোল্ড ফেসিয়াল। জেনে নিন গোল্ড ফেসিয়াল করতে কী কী লাগে
এবং কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হবে –
প্রথম ধাপ: ক্লিনজিং
ক্লিনজিং অর্থ স্কিন পরিষ্কার করা।আমরা বাইরে ঘোরাফেরা করলে এমনকি বাড়িতে থাকলেও ত্বকের উপর
ময়লা জমে।ময়লা লোমকূপ বন্ধ করে দিয়ে ব্রণ,র্যাশের সমস্যা তৈরি করে। তাহলে সমাধান কী?সমাধান হচ্ছে
নিয়মিত ক্লিনজিং করা। কেমিকাল ক্লিনজার দিয়েও করা যায়,ঘরোয়া ক্লিনজার দিয়েও করা যায়।
কেমিকাল ক্লিনজারের কিছু উদাহরণ – Zayn & Myza Vitamin-C foaming cleanser, Lafz
Cleanser,Freyia's Cleanser ইত্যাদি।
বাসায় বসে ক্লিনজিং এর জন্য প্রয়োজন হবে-
● কাঁচা দুধ
● ঠাণ্ডা পানি
নিয়ম:
(১) প্রথমে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে মুখ পরিষ্কার করে নিন।মনে রাখবেন,গোল্ড ফেসিয়ালের জন্য মুখ
প্রস্তুত করে নেয়া খুব জরুরি, যার প্রথম ধাপ ক্লিনজিং। তাই খুব যত্ন সহকারে এটি করবেন।
(২)কাঁচা দুধ দিয়ে তুলো ভিজিয়ে নিন।ওয়াইপসও ব্যবহার করতে পারবেন।বিভিন্ন অনলাইন পেজে,বড় বড় ই
কমার্স সাইটে এবং সুপারশপে পেয়ে যাবেন।
(৩) ভেজানো তুলো দিয়ে আলতোভাবে ৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন।খেয়াল রাখবেন তুলোর রোঁয়া যেন থেকে না
যায়।এটি ত্বকের ক্ষতি করে।
(৪) গোল্ড ফেসিয়াল প্রস্তুতির শেষ ধাপ হলো মুখে ক্লিনজার এর উপাদান গুলো সেট করা। তাই ৫-৭ মিনিট মুখ
এভাবেই রেখে দেবেন।সবশেষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন।ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করার কারণ
হচ্ছে লোমকূপের দৃঢ়ত্ব বাড়ানো যাতে সেটি দুধের গুণাবলি ধরে রাখতে পারে স্কিনে।
গোল্ড ফেসিয়াল এর ক্লিনজিং শেষ! এবারের ধাপ?
২য় ধাপ:স্ক্রাবিং
স্ক্রাবিং বলতে ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করা বোঝায়।এইযে আপনি ক্লিনজিং করলেন, তারপরেও কিন্তু
ত্বকে মৃত কোষ জমে থাকায় ত্বক প্রাণহীন দেখাতে পারে।গোল্ড ফেসিয়ালের স্বর্ণালী জেল্লা পেতে হলে
ঘরোয়া উপায়ে চটজলদি স্ক্রাবিং এ বসতে হবে আপনাকে। স্ক্রাবিং এর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন করে নেয়া
জরুরি ত্বকে।
কীভাবে?
● চিনি-১ চা চামচ
● লেবুর রস- ১ চা চামচ(লেবুতে যাদের এলার্জি তারা লেবু এড়িয়ে যাবেন।কফি ব্যবহার করবেন)
● মধু-১ চা চামচ(তৈলাক্ত স্কিন ব্যতীত সবার জন্য)
নিয়ম :
(১)গোল্ড ফেসিয়াল এর জন্য ক্লিনজিং করে আমরা যে ধাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছি তা হলো স্ক্রাবিং।প্রথমে
স্ক্রাবিং এর উপকরণগুলো উল্লিখিত পরিমাণে খুব ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
(২) খুব নম্রভাবে ২-৩ মিনিট স্ক্রাব করতে হবে।আপনার স্কিনে যদি ব্রণ থাকে বা কোনো রকম ক্ষত থাকবে
জায়গাটি এড়িয়ে যেতে হবে।গোল্ড ফেসিয়াল এর ফেসপ্যাক অংশে ব্রণের সমাধান বিষয়ে আমরা জানাব।
(৩) স্ক্রাব করার পর মিশ্রণটি রাখার প্রয়োজন নেই মুখে।অনেকে রাখার পরামর্শ দেন।কিন্তু ম্যাসাজের
সময়ই গুণাবলী স্কিনের গভীরে চলে যায়। বেশি সময় রাখলে স্কিন গোল্ড ফেসিয়ালের মূল ধাপ ফেসপ্যাক
অংশের উপকারিতা গুলো গ্রহণ করার মতো অবস্থায় থাকবেনা।
তাই সাথে সাথে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে মুখ সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে ফেলুন।
৩য় ধাপ: স্টিমিং
প্রাচীনকাল থেকে গোল্ড ফেসিয়াল কেন,যেকোনো রকম ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে স্টিমিংকে উৎসাহিত করা
হয়।বাষ্পস্নানের ব্যাপারে শুনেছেন নিশ্চয়ই। এখনো স্টিম বাথ খুব জনপ্রিয়। কিন্তু বাষ্পকে এত প্রাধান্য
দেয়ার কারণ কী? কারণটি হচ্ছে আপনি যখন মুখে এই তাপ গ্রহণ করছেন তখন লোমকূপ খুলে গিয়ে ময়লাগুলো
রিলিজ হয়ে যায় এবং ব্রণ সৃষ্টিকারী বা ত্বকের যেকোনো সমস্যা সৃষ্টিকারী জীবাণু মেরে ফেলে। গোল্ড
ফেসিয়ালের লক্ষ ই হলো এন্টি এজিং এর দিকে খেয়াল রাখা। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনেক।
নিয়ম:
(১) ফুটন্ত গরম পানি একটা পাত্রে রেখে ভাপ নিন মাথা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে।
(২)৫ মিনিট হলেই যথেষ্ট।
চতুর্থ ধাপ:ফেসপ্যাক
এতগুলো ধাপ কিন্তু আমরা এই ধাপটি পূরণ করার জন্য ই এসেছি।সকল ফেসিয়ালেই উপরোক্ত ৩টি ধাপ
অনুসরণ করা হয়।কিন্তু গোল্ড ফেসিয়াল বা যেকোনো ফেসিয়ালের সিগনেচার অংশ হলো
ফেসপ্যাক। আসুন জেনে নিই কীভাবে আমরা গোল্ড ফেসিয়াল উপযোগী ফেসপ্যাক বাড়িতে বানাতে পারি-
● টকদই – ১ চা চামচ(অয়েলি স্কিন হলে দই এর পরিমাণ কমিয়ে টমেটো যোগ করবেন,তবে দই
থাকতে হবে)
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় – অতিরিক্ত চুল পড়লে যা করবেন
● লেবুর রস- ১/২ চা চামচ (স্কিন সেন্সিটিভিটি অনুসারে)
● কস্তুরি হলুদ-হাফ চা চামচ
● কাঁচা হলুদের রস-হাফ চা চামচ
নিয়ম:
(১) উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে ৫ মিনিট জিরোতে দিন।এবার আংগুলের সাহায্যে কানের পেছনের অংশে
অথবা হাতে প্যাচ টেস্ট করুন।যদি লাল লাল হয়ে যায় বা কোনোরকম জ্বালাপোড়া করে তবে নতুন করে
ফেসপ্যাক বানিয়ে উপাদানগুলো কম বেশি করে দেখবেন।
(২) ৫ মিনিট আলতো করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
এরপর গোলাপজল অথবা কোনো টোনার ব্যবহার করে ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করবেন।
এই ছিল ঘরোয়া পদ্ধতির গোল্ড ফেসিয়াল এর নিয়ম।
গোল্ড ফেসিয়াল করতে কত টাকা লাগে
আপনি যদি পার্লারে যান তাহলে পার্লার ভেদে খরচ ওঠানামা করবে। গোল্ড ফেসিয়াল করতে কত টাকা লাগে
তা নির্দিষ্ট নয়। তবে মাঝারি মানের পার্লারগুলোতে ১০০০-১৫০০ থেকে শুরু।
সেক্ষেত্রে আপনি একটু বেশি টাকা খরচ করে ভালো কোনো পার্লার থেকে করিয়ে নিতে পারেন।আবার সাশ্রয়ের
মধ্যে চাইলে ফেসিয়াল কিট বা ক্রিম কিনে নিয়ে তা দিয়ে ৩-৪ বার করতে পারবেন মাসে।
সুবিধামতো অপশন বেছে নেবেন বাজেট অনুযায়ী।
গোল্ড ফেসিয়াল কিট বা ক্রিমের নাম
গোল্ড ফেসিয়ালের মূল অংশ হলো এর কিট বা ক্রিম।অনেক কিটের মধ্যে থেকে আপনাকে স্কিন অনুযায়ী কিট
বেছে নিতে হবে। দাম শুরু ৩০০ থেকে।বলাবাহুল্য ৩০০ টাকার থেকে ১০০০ বা ২০০০ টাকা দামের কিট বেশি
ভালো হবে।
বেশ কিছু ব্র্যান্ড গোল্ড ফেসিয়াল কিট লঞ্চ করেছে।
যেমন –
● 3W Clinic Collagen And Gold Special কিটটি স্কিনের জন্য ভালো। দাম পড়বে ১৪০০-১৫০০
টাকা।ব্র্যান্ডেড শপ থেকে নেবেন।
● Biotique Bio Gold Radiant facial kit ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
● Keya Sheth Envie গোল্ড ফেসিয়াল কিটটি ৬৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন।
● Lotus Herbals এর গোল্ড ফেসিয়াল কিট পাবেন ৫০০-৬০০ এর মধ্যে।
● Anonna's এর ফেসিয়াল কিটটি পাবেন ৪০০-৪৫০ টাকায়।
● Elvis গোল্ড ফেসিয়াল কিট ৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন।
● Mumtaz ফেসিয়াল কিটের কম্বো নিতে পারেন।
আপনি ক্রেতা হন অথবা সার্ভিস দাতা,এই প্রোডাক্টগুলো দিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। মানসম্মত প্রোডাক্ট
বেছে নিলে নিজেরাই লাভবান হবেন।আমাদের পরামর্শ থাকবে স্কিন টাইপ বুঝে এগুলোর মধ্যে কোনটা আপনার
সাথে মানাচ্ছে এবং নিরাপদ হচ্ছে তা বুঝে বেছে নেয়া। যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে
নেবেন।অনলাইনে কিনলে ট্রাস্টেড শপ থেকে নেবেন।
গোল্ড ফেসিয়াল কত দিন পর পর করতে হয়
–— গোল্ড ফেসিয়াল বা যেকোনো ফেসিয়াল ই ত্বকের ধরন অনুসারে করা হয়ে থাকে।
ত্বকের বেশ কিছু প্রকারভেদ আছে।তার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের ত্বক নিয়ে যে অভিযোগ তা হলো আমার
ত্বক তেলতেলে হয়ে থাকে!
দেখুন তেলতেলে হয়ে থাকলে র্যাশ,ব্রণ এগুলোর প্রবণতা বাড়ে।আর গ্লাস স্কিন
না হলেও অন্তত স্কিনের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য হলেও আপনাকে নিতে হবে ত্বকের যত্ন। যাদের অয়েলি
স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বক তাদের জন্য কতদিন পর পর গোল্ড ফেসিয়াল করতে হয় তার হিসাব ভিন্ন।
সপ্তাহে ২ বার সর্বোচ্চ গোল্ড ফেসিয়াল করতে পারবেন আপনি যদি অয়েলি স্কিনের অধিকারী হন।
আর যদি অন্যান্য ত্বক যেমন অয়েলি টু কম্বিনেশন, কম্বিনেশন, শুষ্ক, স্বাভাবিক যেমন ত্বক ই হোক তাতে
মাসে ১বার এর বেশি গোল্ড ফেসিয়াল করবেন না।
গোল্ড ফেসিয়ালের অপকারিতা
অসংখ্য উপকারিতা জেনেই আপনারা প্রত্যেকটি ধাপ যত্ন নিয়ে শিখেছেন।তবে সবকিছুর ই ভালো মন্দ দুটো
দিক থাকে।গোল্ড ফেসিয়ালেরও আছে। তবে তা শিথিলযোগ্য।কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই আপনার জন্য গোল্ড
ফেসিয়াল ক্ষতিকর হবেনা।
যেমন –
● আমরা যারা ব্যস্ত থাকি তাদের সচরাচর পার্লারেই ফেসিয়াল করতে হয়।সব পার্লারে পুরোপুরি
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষ থাকবে এটা ধারণা করা ভুল।তাই ফেসিয়াল করার সময় যদি দেখেন যে খুব
জোরে চাপ দিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করা হচ্ছে তাহলে সতর্ক করে দিন। গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা….
ম্যাসাজ ভালো। কিন্তু স্কিনের মতো সেন্সিটিভ বিষয় অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালন কোনো কাজের কথা
নয়।
● গোল্ড ফেসিয়াল করার আগে ত্বক খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করা হয়।ব্ল্যাকহেডস এর সাথে আমরা
সবাই পরিচিত।সাধারণত নাকের দু পাশে ছোপ ছোপ কালো দাগগুলো পড়ে। এগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কার না
করলে ছড়িয়ে গিয়ে পুরো মুখে ব্রণের সমস্যা ছড়াতে পারে।তাই ব্ল্যাকহেডস ওঠানোর জন্য যে
ব্রণস্টিকটি ব্যবহার করা হয়, সেটি শতভাগ জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
● গোল্ড ফেসিয়ালের সবথেকে সিগনেচার অংশ যে ক্রিম তা আগেই বলেছি।প্রাকৃতিক গোল্ড ফেসিয়ালে
যা ফেসপ্যাক,পার্লারে করলে তা থাকে ক্রিমে।যে ক্রিম এত উপকারী সে ক্রিমই কিন্তু সঠিকভাবে
ব্যবহার না করল স্কিনের বারোটা বাজিয়ে দেবে। লক্ষ রাখবেন যেন ক্রিমের আলতো প্রলেপ দিয়ে
ম্যাসাজ করা হয়।অতিরিক্ত ক্রিম ব্যবহার করার কারণে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।তা থেকে
সাধারণ ত্বকে বাম্পস,ব্রণ এবং সংবেদনশীল ত্বক হলে র্যাশ হতে পারে। গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা…
● ফেসিয়াল করার পর কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন।যেমন -স্কিনে মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রাবিং করা যাবে না।
কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারবেন না।আর স্কিনের ছোট ছোট লোমগুলো ফেসিয়াল
করার সময়েই তুলে ফেলা হয়।তাই বাড়তি ওয়াক্সিং করলে স্কিনে বাজে প্রভাব পড়তে পারে।
এরকম ছোটখাটো কিছু বিষয় মনে রাখলেই গোল্ড ফেসিয়াল আপনার জন্য সোনায় সোহাগা!
আশা করছি তথ্যগুলো ভালো লেগেছে জেনে।গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা পুরোপুরি পেতে হলে ভেতর থেকেও
নিজের যত্ন নিতে হবে।বেশি বেশি ফলমূল খান।পানি খাবেন পরিমিত।দিনে দুবার মুখ পরিষ্কার করবেন ভালো
মানের ফেসওয়াশ এর সাহায্যে।আর কখনোই স্কিন টাইপ না বুঝে কোনো প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন না।
আপনার জন্য শুভকামনা!