ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
Table of Contents
ব্রেইন স্ট্রোক সমাচার
ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা, ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ, চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে সাজিয়েছি আমাদের আজকের লেখাটি। চলুন তবে শুরু করা যাক।ছোটখাটো, বড়সড় যেকোনো দূর্ঘটনায় রক্তপাতের ভূমিকা বেশ বড়। অতিরিক্ত রক্তপাত থেকে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।বাহ্যিক রক্তপাত এর জন্য যেমন চিকিৎসা প্রয়োজন, তার চেয়েও বেশি চিকিৎসা প্রয়োজন
ইন্টারনাল ব্লাড লস বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গাণুর রক্তপাতের জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে, কী করে বুঝব যে ভেতরে
রক্তপাত হচ্ছে? এ সবকিছু নিয়েই আজকের আলোচনা।
মস্তিষ্ক আমাদের দেহের প্রাণকেন্দ্র। কোটি কোটি নিউরনের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর ওস্তাদ এই মস্তিষ্ক।
কিন্তু নানা কারণে দেহের অন্যতম চালক মস্তিষ্কে রক্তপাত হতে পারে। ব্রেইন স্ট্রোকের সম্পর্কে বিশদ
জানতে প্রস্তুত তো?
ব্রেইন স্ট্রোক কী
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এ রোগে আছে ব্রেইনের যোগ।কিন্তু কীভাবে? ব্রেইন স্ট্রোক শরীরের এমন একটি
অবস্থা যেখানে ব্রেইনের অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটে।এই হেমারেজের ফলে অনেক সময়
প্যারালাইসিস,মাত্রাতিরিক্ত বমি,কথায় জড়তা এসব সমস্যা সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে
পারে ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে।
ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ
ব্রেইনের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ থেকে ব্রেইন স্ট্রোক হতে
পারে।যে যে কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে তা হলো-
● লাইফস্টাইলে ভারসাম্যহীনতা
আপনি যদি নিয়ম মেনে না চলেন,ঠিক করে খাওয়াদাওয়া না করেন,শরীরচর্চা করতে অনাগ্রহী হন তাহলে শরীরে
এমনিই বাসা বাঁধবে নানা রোগ।হতে পারে ব্রেইন স্ট্রোক। তাই লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনুন।সময়মতো
ঘুমাবেন,সুষম খাবার খাবেন।নিজেকে ভালবাসুন।
● ভিটামিনের অভাব
ব্রেইন স্ট্রোকে ব্রেইন হেমারেজ হয়। একে বলে হেমারহ্যাজিক স্ট্রোক।শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব হলে
ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে।তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল,সবজি এগুলো রাখুন।
● লবণকে না বলুন
খাবারে মিশে থাকা অতিরিক্ত লবণ ডেকে আনে ব্রেইন স্ট্রোকের মতো মরণব্যাধি।বাসার খাবারে চাইলে আপনি
কম বেশি করে নিতে পারবেন নিজের মতো।কিন্তু যাদের বাইরের খাবারের উপর ঝোঁক আছে তারা জানেন স্ট্রিট
ফুড,রেস্টুরেন্টে যেসব খাবার বিক্রি করা হয় তাতে লবণ এর আধিক্য থাকে। অতিরিক্ত লবণের জন্য রক্তচাপ
বাড়ে এবং ব্রেইনে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হয় না। এভাবেই ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হয় অতিরিক্ত লবণ
খাওয়া।তাই পাতে আলাদা করে লবণ খাবেন না।বাসায় অল্প তেল,পরিমিত লবণের খাবার খাওয়ার অভ্যেস করুন।
● অতিরিক্ত ব্যাথানাশক সেবন
আমাদের অভ্যেস হলো সামান্য ব্যাথা অনুভব করলেই একটা ব্যাথানাশক ওষুধ খেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে
থাকে।কিন্তু ব্যাথানাশকে যে স্টেরয়েড আছে তা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।খুব প্রয়োজন না
হলে ব্যাথানাশক সেবন না করাই ভালো। ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
● অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন
ব্রেইন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে হলে মদ বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সর্বোপরি এই কারণগুলো জেনে নিজের ভুলগুলো শুধরে নেয়াই আপনার দায়িত্ব।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে কী হয়
স্ট্রোক হলে সাধারণত শরীরের কোনো কোনো অংশের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগীরা ভারসাম্য
হারিয়ে ফেলেন, দৈনন্দিন কাজকর্ম একা একা সম্পাদন করা কঠিন হয়।
ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ
● ভারসাম্য হারানো
স্ট্রোক হলে রোগীদের ভারসাম্য হারানোর প্রবণতা দেখা দেয়।যেমন -মাথা ঘোরা, মাথা ভারী হয়ে থাকা
ইত্যাদি।
● চোখের সমস্যা
স্ট্রোক হওয়ার পর চোখ কিছুদিন ঝাপসা লাগতে পারে। দূর্বলতার জন্য হতে পারে এটি আবার শারীরিক অন্য
ব্যাপারও থাকতে পারে।
● মুখ ঝুলে পড়া বা অবশ হয়ে যাওয়া
ব্রেইন স্ট্রোক হলে মুখের অর্ধেক অংশ (বিশেষ করে মুখের এক পাশের নিচের অর্ধেক) নিচু হয়ে যাওয়া বা
ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। কথা বলার সময় মনে হয় যে মুখের একপাশ অবশ হয়ে আছে।
● পেশির দুর্বলতা
স্ট্রোকের জন্য পেশির মধ্যে দূর্বলতা তৈরি হয়।কিছু হাত দিয়ে ধরতে সমস্যা হয়।হাত পা কাঁপে এবং পড়ে
● কথা বলায় সমস্যা
স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে (বিশেষত যদি স্ট্রোকটি মস্তিষ্কের বাম দিকে হয়) কথা বলার সমস্যা দেখা
দেয়।পরবর্তীতে স্পিচ থেরাপি দেয়ার মাধ্যমে এটি সমাধান করা সম্ভব।
ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা
ব্রেইন স্ট্রোকের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক যে চিকিৎসা দেয়া হয় তা হলো থ্রম্বোলাস্টিক চিকিৎসা।
রোগলক্ষণ দেখা দিলে পরবর্তী ৩-৪ ঘন্টায় এই মেডিসিন শিরায় প্রবেশ করানো হয়। ব্রেইন স্ট্রোক হলে
করণীয় অংশে বেশ কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা আমরা জানিয়েছি।পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ডাক্তাররা রোগীকে
নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন।
কেও হোমিও বা ভেষজ ধরনের চিকিৎসা নেবেন না।এগুলো শরীরের উল্টো ক্ষতি সাধন করবে।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে করণীয়
প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে আমরা মোটামুটি অবগত।যেকোনো রোগের ই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা থাকে যা
ভয়াবহ ক্ষতি হওয়া থেকে রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে।ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে তো আমরা আলোচনা
করেছি। এই লক্ষণগুলো দেখলে সাথে সাথে কিছু কাজ করতে হবে যাতে হাসপাতালে নেয়া অব্দি পরিস্থিতি আরও
খারাপ না হয়।
যেমন –
● কাত করে শোয়ানো-
এটি প্রথম কাজ।রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে এবং কোনোভাবেই এ অবস্থায় কোনো খাবার বা
ওষুধ খাওয়াবেন না,যা শ্বাসনালীতে আটকাতে পারে।
● বেশিরভাগ স্ট্রোকের রোগীই বমি করে দিতে পারেন।মুখে জমে থাকা লালা, বমি পরিষ্কার করে দেবেন
কারণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যেকোনো সময়ই জরুরি। রোগীর চেতনা থাকলে এইসব অপরিষ্কার থাকলে
সে অস্বস্তিবোধ করবে এবং ডাক্তারের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে চাইবেনা।
● গায়ে থাকা জামাকাপড় ঢিলা করে দেয়া।সবথেকে ভালো হয় সুতির গেঞ্জি, পাতলা শার্ট, কামিজ এসব
পরালে। রোগীকে কোনোভাবেই দমবন্ধকারী পরিবেশে নেয়া যাবেনা।
এগুলো ছিল প্রাথমিক চিকিৎসা। এবার যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নেয়া জরুরি। আগের মেডিকেল
হিস্টোরি ডাক্তারকে বোঝানোর অবস্থায় রোগী থাকবেনা।তাই বিগত সকল টেস্ট রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন
সাথে নিয়ে যাবেন।
হাসপাতালে গেলে বেশ কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা দিতে পারে।যেমন –
(১) ব্রেইনের রেডিওলজিক টেস্ট
(২)সিটিস্ক্যান
(৩)এমআরআই
(৪) ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার টেস্ট
(৫)রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বোঝার টেস্ট
পরীক্ষাগুলো হাসপাতালভেদে ব্যয়বহুল হতে পারে।সেটি মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় অর্থ সাথে নেবেন।বাকি
নির্দেশনা ডাক্তাররা জানিয়ে দেবেন।ব্রেইন স্ট্রোক হলে করণীয়…..
ব্রেইন স্ট্রোকের ডাক্তার
কেও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা পাওয়া যাবে ভালো ভালো হসপিটালের নিউরোলজি
বিভাগগুলোয়। কোনো ডাক্তারের নাম আমরা উল্লেখ করছি না তবে এই হসপিটালগুলোয় কর্মরত সকল
নিউরোলজিস্ট ই নিজ নিজ জায়গা থেকে সফল।
● ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল- DMC
সেরাদের সেরা বলতে যা বোঝায় ডিএমসি তা ই। এখানে যেসব নিউরোলজিস্ট আছেন তারা সহ খুব
মেধাবী ইন্টার্ন ডক্টর রা আছেন।আইভি থ্রোম্বলাইসিস নামের একটি পরীক্ষা আছে ব্রেইন স্ট্রোক
সম্পর্কিত।এই পরীক্ষাটি আপাততঃ করা হচ্ছে না ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অন্য কোনো
হাসপাতাল থেকে করিয়ে নিতে হবে।ঢামেকের ডাক্তাররাই জানিয়ে দেবেন আপনাকে।ব্রেইন স্ট্রোকের ডাক্তার……
● বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়(BSMU)
ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীদের বেশ ভালো রকম প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এই হসপিটালে। আলাদা করে একটি
স্ট্রোক ইউনিট চালু করা হয়েছে।সেই সাথে আছে ৩ বেডের জরুরি বিভাগ।অত্যাধুনিক টেকনোলজির
সাহায্য নিয়ে এখানে ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা দেয়া হয়।ব্রেইন স্ট্রোকের ডাক্তার….
এই দুটি হসপিটাল ছাড়াও আপনি যেকোনো সরকারি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে যোগাযোগ করলে উপকৃত
হবেন।তবে উল্লিখিত হসপিটালে বাড়তি যত্ন নেয়া হয়।
ব্রেইন স্ট্রোকের ঔষধ
clopitab A, Rosave Trio,Rosutor Gold এই ধরনের ক্যাপসুলগুলো ডাক্তাররা ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীদের
খেতে পরামর্শ দেন।তবে একেকজনের বায়োলজিকাল অবস্থা একেকরকম বিধায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া
কোনোভাবেই এগুলো সেবন করা যাবেনা।
ব্রেইন স্ট্রোকের ঔষধ খুবই সেন্সিটিভ একটি ব্যাপার।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ব্যাপারে ধারণা দেয়া
ভুল।কেননা আপনার শরীরে এমন অন্যান্য রোগ থাকতে পারে যার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ সেবনে ব্রেইন
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমলেও শরীরের অন্য কোনো অঙ্গের ক্ষতি হয়ে গেলো। তাই ঠিকঠাক ভাবে রোগ
পরীক্ষানিরীক্ষা করে ডাক্তারকে মেডিকেল হিস্টোরি জানাবেন।সঠিক ঔষধ না খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
থেকে মৃত্যু হওয়ারও নজির আছে।ব্রেইন স্ট্রোকের ঔষধ…..
ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর খাবার তালিকা খুবই ভেবেচিন্তে বানানো উচিত।কারণ ঠিক কোন খাবার কতটুকু খেলে
শরীরের ক্ষতি হবেনা তা যদি ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজে নিজে বোঝার চেষ্টা করেন তাহলে হয়তো
উপকারী খাবারই পরিমিত না খেয়ে শরীরের ক্ষতি করে ফেলবেন।
আসুন কয়েকরকম খাবারের কথা জেনে নিই।প্রয়োজন মতো ডাক্তারের সাথে কথা বলে পরিমাণ কম-বেশি করে
নিতে পারেন।
● মিষ্টি আলু –
(১)মিষ্টি আলুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলস যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
(২)মিষ্টি আলুতে যে ভিটামিনগুলো আছে সেগুলো হলো-
ভিটামিন এ, ভিটামিন সি,ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই। প্রত্যেকটি ভিটামিন এর ই
নিজস্ব কার্যক্ষমতা আছে।
(৩)মিষ্টি আলুতে বায়োটিনের উপস্থিতি লক্ষণীয়। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
(৪) আমরা জানি ব্রেইন স্ট্রোকে উচ্চ রক্তচাপের একটা বড় ভূমিকা থাকে।যেকোনো ধরনের স্ট্রোকের
ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং স্ট্রোকের
ঝুঁকি থেকে আমাদের মুক্ত রাখে।
(৫) ব্রেইন স্ট্রোক শারীরিক অন্যান্য ভারসাম্যের তারতম্যের জন্যেও হয়ে থাকে।খারাপ কোলেস্টেরল
আমাদের দেহের নানান ক্ষতি সাধন করে যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। মিষ্টি আলু খারাপ
কোলেস্টেরল কমিয়ে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০-৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর খাবারের
তালিকা তে তাই এ খাবারটি রাখা জরুরি। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
● বাদাম –
আমাদের দেশে নানারকম বাদাম পাওয়া যায়।চিনা বাদাম,কাঠ বাদাম,পেস্তা বাদাম,কাজু বাদাম এই ধরনের
বাদামগুলো চোখে পড়ে।এত সাধারণ একটা খাবার যে এত উপকারী হতে পারে তা আসলে কল্পনার বাইরে।
বাদাম কিন্তু ফ্যাট জাতীয়।তবে সে ফ্যাট ভালো। বাদাম খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ে আর খারাপ
কোলেস্টেরল কমে যায়।
দিনে মোটামুটি ৩০-৪০ গ্রাম বাদাম যদি আমরা খেতে পারি তাহলে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০-৮০ শতাংশ
কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর খাবার তালিকায় তাই বাদাম থাকা জরুরি পরিমিত
পরিমাণে।কাঠবাদাম বেশি উপকারী। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
● মিষ্টি কুমড়ার বীজ-
একটু আগেই বলেছি মিষ্টি আলুর কথা। এবার বলব মিষ্টি কুমড়ার কথা। ঠিক মিষ্টি কুমড়ার কথা নয়,মিষ্টি
কুমড়ার বীজের কথা। মিষ্টি কুমড়ার বীজে কী এমন আছে যা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়?
মিষ্টি কুমড়ার বীজে আছে-
(১) ভিটামিন বি
(২)ম্যাগনেশিয়াম
(৩)প্রোটিন
(৪) লোহা
(৫)ফ্যাটি এসিড,ইত্যাদি।
মিষ্টি কুমড়ার বীজে থাকা এই উপাদানগুলো বিশেষ করে ফ্যাটি এসিডের যে আধিক্য সেটি শরীরের
মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল এর সাথে আপোষ করেনা।খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে দেহকে সুস্থ
রাখে।ভিটামিনের সঠিক ব্যালেন্স আমাদের ব্রেইনের সাথে সাথে দেহের অন্যান্য প্রাণরাসায়নিক কাজ সচল
রেখে ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
প্রতিদিন ১০-১২ টি বীজ রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায় দীর্ঘমেয়াদী উপকার পাওয়ার জন্য।ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
● ফলাহার-
ফল খেতে কে না পছন্দ করে? এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবেনা যে একটা হলেও ফল পছন্দ করেনা।
ফলও কিন্তু ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর জন্য আশীর্বাদস্বরুপ। কিন্তু কোন কোন ফল?
চলুন জেনে নেয়া যাক।
কলা:
কলা যে কেন সুপার ফুড হলো না!ইন্সট্যান্ট এনার্জি দেয়ার পাশাপাশি কলার উপকারিতা ব্রেইন স্ট্রোকের
রোগীর খাবারের তালিকাতেও এসে পড়েছে।যেমন –
(১) পাকা কলা খেতে যেমন সুস্বাদু একই সাথে সেটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।কীভাবে করে
বলুনতো? প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে পাকা কলায়,সেই কারণে।
(২)কলার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হলো পটাশিয়াম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
করে।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে শরীরের অন্যান্য কাজের ভারসাম্য বজায় থাকে।ব্রেইন স্ট্রোকের
রোগীদের জন্য শরীরের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে হওয়া খুবই জরুরি। একটু এদিক সেদিক হলেই মস্তিষ্কের বড়
রকম ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তরমুজ:
তরমুজে যে খাদ্য উপাদান গুলো থাকায় এটি ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর খাবারের তালিকায় জায়গা করে
নিয়েছে তা হলো-
(১) পানি( কোষের বিপাকীয় কাজে সাহায্য করে। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
করে)
(২) এল-সাইট্রুলাইন (স্ট্রোক প্রতিরোধী উপাদান।রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এটি।)
(৩) অ্যামাইনো এসিড (ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধী উপাদান) ,ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
পেঁপে:
পেঁপেতে রয়েছে পটাশিয়াম,ফ্ল্যাবানয়েড সহ আরও বিভিন্ন রকম ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধী উপাদান।তবে
ডায়বেটিস যদি থাকে তাহলে পাকা পেঁপে না খাওয়াই উত্তম। সেক্ষেত্রে কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন তরকারি
হিসাবে। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
● টমেটো –
টমেটোতে যে জাদুকরী উপাদান আছে সেটিকে লাইকোপেন বলে।টমেটো কিন্তু অনেক কাজের কাজী।কিন্তু ব্রেইন
স্ট্রোক প্রতিরোধে টমেটোর একটা উপাদানই ভীষণ উপকারী।উচ্চমাত্রায় লাইকোপেন থাকায় এটি ব্রেইন
স্ট্রোক সহ যেকোনো স্ট্রোক প্রতিরোধে কাজ করে। লাইকোপেন সমৃদ্ধ টমেটো খেলে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি
৫৫ শতাংশ অবধি কমে। তাই ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর খাবারের তালিকায় রাখার মতো খাবার টমেটো। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
● সামুদ্রিক মাছ-
মিঠা পানিতে যে মাছ পাওয়া যায় যেমন রুই,কাতলা সেসবের থেকে সামুদ্রিক মাছের পুষ্টিগুণ বেশি।সমুদ্রের
পানিতে সে বিপুল পরিমাণে উপকারী খনিজ থাকে তা সামুদ্রিক মাছের শরীর থেকে আমরা গ্রহণ করতে পারি।
সামুদ্রিক মাছে রয়েছে-
(১) প্রোটিন (দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সুস্থ দেহে ব্রেইন স্ট্রোকের সম্ভাবনা
খুবই কম)
(২) মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও প্রোটিনের ভূমিকা আছে।যেহেতু ব্রেইন স্ট্রোক মস্তিষ্ক সংক্রান্ত
রোগ তাই সামুদ্রিক মাছ খাবার হিসাবে ভালো।
(২) ওমেগা-৩ (এটি এক ধরনের ফ্যাটি এসিড।ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধ করে)
উল্লিখিত খাবারগুলো ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর খাবারের তালিকা তে থাকলে আশা করা যায় ব্রেইন স্ট্রোক
প্রতিরোধী হিসাবে কাজ করবে এবং স্ট্রোক পরবর্তী সময়ের জন্যেও এই খাদ্যতালিকা উপযোগী। তবুও
ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।
গোল্ড ফেসিয়ালের উপকারিতা
ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর ব্যায়াম
সাধারণভাবে দুর্বল পেশি বা দুর্বল পাশটি রোগী কম ব্যবহার করতে চান। ফলে এই দুর্বল পেশির আকার ছোট
হয়ে আসে, কুঁচকে যায় ও শক্ত হয়ে যায়। অবশ অংশে সংক্রমণ, ঘা বা বেড সোর, রক্তনালিতে রক্ত জমাট
বেঁধে যাওয়ার মতো জটিলতা হতে পারে।
ব্রেইন স্ট্রোকের রোগী স্ট্রোকের পর প্রচন্ড কাহিল হয়ে পড়েন। এসময় কিছু ব্যায়াম ধীরে ধীরে শুরু করা
জরুরি যাতে দেহ দ্রুত সচল হয়। ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর ব্যায়াম
যেমন –
● ফিজিওথেরাপি
যদি রোগীর অবস্থা যদি মোটামুটি ভালো হয় তাহলে স্ট্রোকের চিকিৎসার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে আস্তে
আস্তে ফিজিওথেরাপি শুরু করতে হবে।ফিজিওথেরাপি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেয়।
ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীদের শরীরের এক পাশ অচল হয়ে যাওয়া খুব লক্ষণীয়।কাজের ক্ষমতা কমে
যায়।সেক্ষেত্রে রোগী ওই পাশটি খুব বেশি ব্যবহার করতে চান না। এ থেকে দূর্বল পেশিগুলো আরও
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে-
(১)আকার ছোট হয়
(২)কুঁকড়ে আসে
৩)রক্ত জমাট বাঁধে
(৪)শক্ত হয়ে যায়
(৫) অবশ অংশে সংক্রমণ হয়।
এই সমস্যাগুলো এড়াতে ফিজিওথেরাপি কার্যকরী ব্যায়াম। ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর ব্যায়াম
● বেড পজিশনিং
(১)রোগীকে কাত করে শোয়ানো।
(২) দুই ঘণ্টা পরপর পাশ ফেরানো।
● জয়েন্টের ব্যায়াম
(১)হাত ও উপরের সন জয়েন্টগুলো নরমাল পজিশনে রাখা।
(২) দিনে ৫-১০ বার নাড়ানো।
(৩) চেতনা থাকলে দিনে কয়েকবার বিছানায় ধরে বসানো।
● স্পিচ থেরাপি
অনেক সময় ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর কথা বন্ধ হয়ে যায়।তোতলানো বা কথা বলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য
স্পিচ থেরাপি দিলেই আশা করা যায় ধীরে ধীরে রোগীর কথা স্বাভাবিক হবে। ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর ব্যায়াম
ভারী ব্যায়াম ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর জন্য প্রযোজ্য না। উপরোক্ত হালকা ব্যায়ামগুলোই সময় নিয়ে
ডাক্তারের পরামর্শে চালিয়ে যেতে হবে।
ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধে নিজে সতর্ক হোন এবং পরিবারের সবাইকে সতর্ক করুন। ভালো লাইফস্টাইলে
চললে নিজে যেমন সুস্থ থাকবেন সেই সাথে মানসিক প্রশান্তিও পাবেন।বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থা খুবই
ব্যয়বহুল।আর স্ট্রোক থেকে যে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নেয়ার মতো হবে এমন ভাবা ভুল।
নিয়মিত শরীর চেকাপ করুন।ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিরেকে কোনো মেডিসিন গ্রহণ করবেন না।আজ এ
পর্যন্তই।সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।