বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার
জ্বর আমাদের জন্যে অতি পরিচিত একটি অসুস্থ্যতা। আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভাইরাসের সংক্রমন, হঠাৎ বৃষ্টিতে ভেজাসহ বিভিন্ন কারনে বছরের বিভিন্ন সময় আমরা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকি। সাধারনত ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণ করলে, ২/৩ দিন বিশ্রাম নিলে ও প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষুধ গ্রহণ করলে জ্বর ঠিক হয়ে যায়। তবে বিপত্তি হয় তখন, যখন কয়েক দিন পর পরই জ্বর হতে থাকে। এই বার বার জ্বর আসা আমাদের অনেকেরই চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজ আমরা আলোচনা করবো বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক বার বার জ্বর আসার কারনগুলি কেননা সমস্যা শনাক্ত করতে পারলে সমাধান টা অনেক সহজ হয়ে যায়।
যখন কোনো ভাইরাস শরীরকে আক্রমণ করে বা কোনো রোগ শরীরে বাসা বাধার চেষ্টা করে তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেই ভাইরাস বা জীবাণুর সাথে লড়াই করার জন্যে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, শরীরের এই বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রাকেই আমরা জ্বর বলি। এদিক থেকে ভাবলে জ্বর হওয়া ভালো, কেননা শরীরে কোনো রোগ বাসা বাধার চেষ্টা করলে বা ভাইরাস আক্রমণ করলে শরীর দ্রুত তা শনাক্ত করতে পারছে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। তবে বার বার জ্বর হতে পারে বিভিন্ন জটিল রোগ বা মরনব্যাধির লক্ষন। কিছু রোগ শরীরকে বার বার আক্রমণ করতে পারে বা কোনো জটিল রোগ শরীরে বাসা বাধতে পারে ফলে বার বার জ্বর হতে পারে।
Table of Contents
বার বার জ্বর আসার কারন :
- লাঞ্চে বা ফুসফুসে পানি জমাঃ বিভিন্ন কারনে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, কিডনি জটিলতা এমনকি অপুষ্টির জন্যেও ফুসফুস বা লাঞ্চে পানি জমতে পারে। ফুসফুসে পানি জমলে ঘন ঘন জ্বর হতে পারে। এক্ষেত্রে যে পর্যন্ত ফুসফুসের পানির চিকিৎসা না করা হবে সেই পর্যন্ত কয়েকদিন পর পর জ্বর হতেই থাকবে।
- নিউমোনিয়াঃ অনেক সময় হালকা নিউমোনিয়া হলে রুগী বুঝতেই পারে না তার নিউমোনিয়া হয়েছে তাই সে ডাক্তারের কাছেও যায় না নিউমোনিয়ার চিকিৎসাও গ্রহণ করে না। ফলে নিউমোনিয়া থেকেই যায়। আর এজন্যেই কয়েক দিন পর পর অর্থাৎ বার বার জ্বর আসে। নিউমোনিয়ার চিকিৎসা গ্রহণ না করা পর্যন্ত এভাবে জ্বর আসতেই থাকবে।
- ব্রংকাইটিসঃ বার বার জ্বর আসার অন্যতম কারন হতে পারে ব্রংকাইটিস। কেননা ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুদেরও বার বার জ্বর আসতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্রংকাইটিস এর চিকিৎসা না করানো পর্যন্ত এভাবে বার বার জ্বর আসতে পারে।
- মূত্রতন্ত্রের ত্রুটিঃ মূত্র তন্ত্রের ত্রুটি থাকলে বার বার প্রস্রাবে সংক্রমন হতে পারে যা বার বার জ্বর আসার অন্যতম কারণ হতে পারে। মূত্র তন্ত্রের ত্রুটি অনেক সময় জন্মগতও হয়ে থাকে। তাই প্রস্রাবে সংক্রমণ থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ।
- এইচআইভি ও ক্যান্স্যারঃ ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির লক্ষন হিসেবেও বার বার জ্বর আসতে পারে। ক্যান্সার রুগীদেরও ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে। তাছারা এইডস আক্রান্ত রোগীদেরও বার বার জ্বর হয়। ক্যান্সার ও এইচআইভির মতো মরণব্যাধির অন্যতম লক্ষন ও বার বার জ্বর আসা।
- কিডনি, লিভার ও হার্টের বিভিন্ন রোগের জন্যেঃ জ্বর অনেক জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। আর উক্ত জটিল রোগের চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত বার বার জ্বর আসতে পারে। কিডনি, লিভার ও হার্টের বিভিন্ন রোগের জন্যে রোগীর বার বার জ্বর আসতে পারে। বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসঃ যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে না রাখে সেক্ষেত্রে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগ বা জীবাণু আক্রমন করতে পারে। তাই যে সব ডায়াবেটিস রোগী নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে না তাদের বার বার জ্বর আসতে পারে।
- কোল্ড এলার্জি ও খাবার এলার্জিঃ যাদের কোল্ড এলার্জি আছে তাদের বৃষ্টিতে ভেজা, পুকুরে গোসল করা, ঠান্ডা পানিতে গোসল করা, ঠান্ডা খাবার খাওয়াসহ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজের জন্যে জ্বর হতে পারে। কোল্ড এলার্জির জন্যেও বার বার জ্বর আসতে পারে। তাছাড়া যাদের খাবার এলার্জি আছে তাদের যে সব খাবারে এলার্জি আছে সেই সব খাবার গ্রহণের প্রতিকিয়া হিসেবেও অনেক সময় জ্বর আসে। এলার্জি থাকা খাবার বার বার গ্রহনের ফলে বার বার জ্বর আসতে পারে।
- ধূমপানের ফলে ইনফেকশনঃ ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ইনফেকশন হতে পারে। আর ফুসফুসে ইনফেকশনের জন্যেও ঘন ঘন জ্বর হতে পারে । তাই বলা যায় ক্রমাগত ধূমপান বার বার জ্বর হওয়ার অন্যতম কারন।
- কায়িক পরিশ্রম না করাঃ বার বার জ্বরের অন্যতম কারন হতে পারে কায়িক পরিশ্রম না করা। কায়িক পরিশ্রম না করলে শরীর আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগ শরীরকে আক্রমণ করতে পারে। তাই বলা যায় কায়িক পরিশ্রম না করা বার বার জ্বর আসার কারণ হতে পারে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সহজেই রোগ আক্রমন করতে পারে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষ বেশি বেশি রোগে আক্রান্ত হয়। তাই বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগও তাদের আক্রমন বেশি করে ফলে তাদের ঘন ঘন জ্বর হয়।
বার বার জ্বর হওয়া মোটেই কোনো ভালো লক্ষন নয়। ঘন ঘন জ্বর মানেই শরীরে বাসা বেধেছে বড় কোনো রোগ। কেননা, কোনো জীবাণু বা রোগ শরীরে বাসা বাধার চেষ্টা করলেই তখন শরীর ঐ জীবাণুর বিরোদ্ধে লড়াই করার জন্যেই শরীরের তাপ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ বার বার জ্বর হচ্ছে মানে শরীর বার বার বিভিন্ন রোগ বা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে বা ইতিমধ্যেই বড় কোনো রোগ শরীরে বাসা বেধেছে। বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার
জ্বর না কমার কারণ
বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার
বার বার জ্বর হওয়া দূর্বল ইমিউন সিস্টেমের লক্ষন। কেননা বার বার জ্বর হচ্ছে মানেই শরীরে হয় কোনো বড় রোগ বাসা বেধেছে কিনবা বাসা বাধার চেষ্টা করছে অথবা শরীরে বার বার ভাইরাসের আক্রমণ হচ্ছে। কারনটা যাই হোক সব সমস্যার মূলে কিন্তু থাকছে দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই বার বার জ্বর আসা প্রতিরোধ করতে হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এমনসব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর এমন সব অভ্যেস ও খাবার ত্যাগ করতে হবে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুস্থ্য পরিবেশে থাকতে হবে। ধূমপান মদ্যপানসহ সকল ধরনের মাদক গ্রহণের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। সুষম খাবার গ্রহন করতে হবে। বার বার জ্বর আসার কারন ও প্রতিকার
যেহেতু বার বার জ্বর আসা জটিল কোনো রোগের লক্ষন হতে পারে তাই এ ব্যাপারটাকে মোটেই হালকা ভাবে নেয়া যাবে না। বার বার জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করবেন।