লাইফস্টাইলহেলথ

জ্বর ও বমি হলে করণীয়

জ্বর ও বমি দুটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। আমরা এমন অনেকেই আছি যারা বছরে একাধিকবার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকি। জ্বর বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। জ্বরের সাথে আরোও বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতাও দেখা দিতে পারে। যেমন- মাথাব্যথা, সর্দি, কাশি, অবসাদ আছন্ন ভাব, ঝিমুনি ভাব, খিচুনি, ডাইরিয়া এমনকি অনেক সময় জ্বরের সাথে বমিও হতে পারে যে কোনো বয়সের মানুষ অর্থাৎ শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক বা বৃদ্ধ যে কেউ এসব স্বাস্থ্য জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। আমাদের পরিবারেরও যেকেউ এসব স্বাস্থ্য জটিলতার সম্মুখিন হতে পারে তাই আমাদের সকলেরই জ্বর ও বমি হলে করণীয়সমূহ জেনে রাখা উচিত। আজ আমরা আলোচনা করবো, জ্বর ও বমি হলে করণীয় সম্পর্কে।

 

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে, জ্বর কোনো রোগ নয়। বরং জ্বর হচ্ছে অন্যকোনো রোগের উপসর্গ। জ্বর বিভিন্ন কারনে হতে পারে যেমন- ভাইরাসের আক্রমন, বৃষ্টির পানিতে ভেজা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, আকস্মিক পাওয়া মানসিক কোনো আঘাত বা কোনো শারীরিক আঘাত বা জটিল কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে। জ্বরের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে অনেক সময় বমিও হয়ে থাকে। জ্বর ও বমি হলে করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে এসব স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হলেও দ্রুতই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

 

জ্বর ও বমি হলে করণীয়ঃ

 

  •         বিশ্রামে থাকাঃ জ্বর ও বমি শরীরকে অনেক বেশি দূর্বল করে দেয়। এ সময় শরীরকে বেশি সক্রিয় রাখলে শরীর আরোও বেশি দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। এসময় বিশ্রামে থাকা অত্যান্ত জরুরী। বিশ্রামে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রনে থাকবে, বমি বমি ভাবও কমে যাবে।
  •         প্রচুর পানি পান করাঃ জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে, ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে বমিও শরীর থেকে লবন ও পানি বের করে দেয়। যার ফলে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই এসময় প্রচুর পানি পান করা উচিত। তাছাড়া পানি শরীরের বিষাক্ত,দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
  •         ভেজা কাপড়ের জলপট্টিঃ কোনো কাপড়কে পানিতে ভিজিয়ে তা ঘাড়ে ও মুখে দিয়ে রাখলে অনেকটা আরাম বোধ হয়। তাছাড়া ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে দিলেও জ্বর দ্রুত কমে যায় সেই সাথে বমি বমি ভাবও কেটে যায়।
  •         তরল খাবার গ্রহন করাঃ জ্বর ও বমির ফলে সৃষ্ট পানিশূন্যতা দূর করতে প্রচুর তরল খাবার গ্রহন করা উচিত। যেমন- ডাবের পানি, ফলের রস, খাবার স্যালাইন। এসব তরল খাবার শরীররের পানি শূন্যতা দূর করবে।
  •         আদাঃ আদার অনেক ঔষুধি গুণ রয়েছে তা তো আমাদের সকলেরই জানা এক টুকরো আদা মুখে রাখলে কমে যাবে বমিভাব। তাছাড়া আদা চা খাওয়া যেতে পারে। আদা চা সর্দি-জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
  •         লেবুঃ জ্বর ও বমি কমানোর জন্যে লেবু অনেক কার্যকর। লেবুতে থাকা এসিড বমিভাব কমাতে সাহায্য করে। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও সামান্য পরিমান লবণ মিশিয়ে দ্রবন বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া লেবুর শরবতও বেশ কার্যকর।
  •         দ্বিগুন ঔষুধ গ্রহণ না করাঃ অনেকেই জ্বর দ্রুত কমানোর জন্যে দ্বিগুন ঔষুধ গ্রহন করে থাকে যা মোটেই উচিত নয়। অনেক সময় হিতে বিপরিত হতে পারে। উপকার তো নয় ই বরং ক্ষতির কারন হতে পারে এই অভ্যাস।
  •         বরফ গোসল না করাঃ অনেকেই জ্বর ও বমি হলে, অতি ঠান্ডা পানি কিনবা বরফ দেয়া পানিতে গোসল করে থাকে। যা কোনো ভাবেই উচিত নয়। বরফ পানি বা ঠান্ডা পানিতে গোসলের ফলে জ্বর আরোও বাড়তে পারে এমনকি রোগীর কাপুনি বা খিচুনিও হতে পারে।
  •         সুষম খাবার খাওয়াঃ জ্বর ও বমি শরীরকে অনেক দূর্বল করে দেয়। তাই এ সময় সুষম খাবার খাওয়া অনেক জরুরী। সুষম খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জ্বর ও বমির ফলে অনেকের খাবার প্রতি অনিহা দেখা দেয়, এক্ষেত্রে সুষম খাবার অল্প অল্প করে বার বার গ্রহন করা উচিত।

 

শিশুদের জ্বর ও বমি হলে করণীয়

 

প্রচুর তরল খাবার খাওয়াতে হবে সাথে বুকের দুধও। হালকা গরম পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা যদি ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ( ৬ বছরের নিচের সিশুদের জন্যে) বা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ( ৬ বছরের বেশি সিশুদের জন্যে)  এর বেশি হয় কিনবা বমি কয়েক ঘন্টা ধরে চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। কেননা জ্বর ও বমির ফলে শিশুর পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা তার জীবনের জন্যে হুমুকির কারনও হতে পারে।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

 

জ্বর ও বমি হলে উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরন করে বেশির ভাগ সময় বাসায় ই রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বর ও বমি জন্যে উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করেও রোগীর তেমন উন্নতি হয় না।  সেক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। অনেক সময় জ্বর ও বমি বিভিন্ন জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবেও দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া ,করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন জটিল রোগের উপসর্গও জ্বর ও বমি তাই এদুটি উপসর্গকে মোটেই হালকা ভাবে নেয়া যাবে না।

 

 

>>>যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যেতে হবেঃ

  •         যদি বমির সাথে রক্ত যায় ।
  •         তীব্র মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে।
  •         প্রচুর পেটে ব্যথা হলে।
  •         রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হলে।
  •         জ্বর ও বমির সাথে ডাইরিয়া হলে।

 

তথ্য সমন্বয়ঃ উইকিপিডিয়া

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button