লাইফস্টাইলহেলথ

জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয় সম্পর্কে। জ্বর ও পাতলা পায়খানা আমাদের জন্যে অতি পরিচিত অসুস্থতাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমরা প্রায় সকলেই বছরের বিভিন্ন সময় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকি। অনেকের তো আবার বছরের ২/৩ বার বা তার চেয়েও বেশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডাক্তারদের মতে জ্বর নিজে কোনো রোগ নয় বরং জ্বর অন্যকোনো রোগের উপসর্গ। অনেক সময় জ্বরের সাথে আরোও বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়। যেমন- সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, বমি হওয়া ও পাতলা পায়খানা হওয়া তার মধ্যে অন্যতম।

 জ্বর ও পাতলা পায়খানা বাংলাদেশের আবহাওয়া ও খাদ্যাভাসের প্রেক্ষিতে বেশ পরিচিত দুটি স্বাস্থ্য জটিলতা। জ্বর ও পাতলা পায়খানা মূলত ডাইরিয়ার লক্ষন। আমরা যে কেউ বছরের যে কোনো সময় এধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় পড়তে পারি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের এ রোগের ঝুকি বেশি থাকে। আমরা সকলেই জানি, প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধই উত্তম। তাই জ্বর ও পাতলা পায়খানার মতো স্বাস্থ্য জটিলতা বা অসুস্থ্যতা থেকে সুস্থ্য থাকতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে কেন হয় জ্বর ও পাতলা পায়খানা। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জ্বর ও পাতলা পায়খানার কারণ।

 

কেন হয় জ্বর ও পাতলা পায়খানা ?

 

> >> সাধারনত পরিপাকতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের জন্যেই জ্বর ও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। জ্বর ও পাতলা পায়খানা মুলত ডাইরিয়ার লক্ষন তাছাড়া করোনা ভাইরাসসহ আরো বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমনেও হতে পারে জ্বর ও পাতলা পায়খানা। জ্বর ও পাতলা পায়খানার অন্যান্য কারনগুলি হলো-

  •         দূষিত পানিঃ জ্বর ও পাতলা পায়খানার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে দূষিত পানি। অপরিষ্কার, নোংরা বা দূষিত পানি পান করার কারনে জ্বর ও পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  •         অস্বাস্থ্যকর পরিবেশঃ অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাতলা পায়খানা ও জ্বরের কারন হতে পারে। কেননা অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে থাকে যা বিভিন্ন ভাবে মানব শরীরে প্রবেশ করে জ্বর ও পাতলা পায়খানাসহ বিভিন্ন অসুস্থ্যতার কারন হতে পারে।
  •         অস্বাস্থ্যকর উপায়ে খাদ্য সংরক্ষনঃ খাদ্য যদি সঠিকভাবে সংরক্ষন না করা হয় সেক্ষেত্রে খাদ্যের সাথে বিভিন্ন ছত্রাক ও জীবানু মিশে যেতে পারে। যা পেটে গেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে। তাছাড়া গরমের দিনে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়, অতিরিক্ত গরমের জন্যে খাবারগুলি আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না । এসব খাবার গ্রহনও হতে পারে জ্বর পাতলা পায়খানার কারন।
  •         পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকাঃ অনেকেই হাতের নখ বড় রাখেন, নখের ভেতর জমে থাকা জীবানুও হতে পারে অসুস্থ্যতার কারন। তাছাড়া খাবার আগে বা মূত্রত্যাগের পরে ঠিক মতো হাত না ধুয়ার জন্যেও ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণ হতে পারে। যা পরবর্তীতে জ্বর ও পাতলা পায়খানার কারন হতে পারে।

 

জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করনীয়
জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করনীয়

চলুন এবার জেনে নেই জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়ঃ

 

  •         স্যালাইন খেতে হবেঃ পরিষ্কার হাতে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে স্যালাইন তৈরি করতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার হবার পর স্যালাইন খেতে হবে।
  •         তরল খাবার গ্রহনঃ জ্বরের জন্যে শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে তাই শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। আবার বার বার পাতলা পায়খানা হওয়ার জন্যেও শরীর থেকে অনেক লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। ফলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানি শুন্যতা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই এসময় প্রচুর পানি খেতে হবে। পানি ছাড়াও ডাবের পানি, চিড়ার পানি, ফলের রসের মতো বিভিন্ন তরল খাবার খেতে হবে।
  •         পাতলা পায়খানা বাড়তে পারে এমন সব খাবার এড়িয়ে চলতে হবেঃ কিছু খাবার আছে যা খেলে ডাইরিয়া বা পাতলা পায়খানা বাড়তে পারে এসব খবার এডিয়ে চলতে হবে।

> ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না । এসব খাবার পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা বাড়াতে পারে।

> কিছু ফল ও সবজি আছে যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরোও বাড়িয়ে দেয় এসব এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- মিষ্টি কেক, মটরশুটি, কর্ণ ইত্যাদী।

> এসময় ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

> দুধের তৈরী যে কোনো খাবারই এড়িয়ে চলতে হবে। দুধ,দধি,সেমাই, দুধের পিঠা সহ দুধের তৈরী যে কোনো খাবারই পাতলা পায়খানা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই দুধের তৈরী সকল ধরনের খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

  •         ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে দেয়াঃ জ্বর ও পাতলা পায়খানার ফলে শরীরে অস্বস্থি ভাব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিলে জ্বর দ্রুত কমার পাশাপাশি রোগী কিছুটা স্বস্তিও বোধ করবে।
  •         ব্যায়াম বন্ধ রাখতে হবেঃ জ্বর ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত অবস্থাতে ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করা ঠিক না। কেননা, ব্যায়াম পানিশূন্যতা,পাতলা পায়খানা,বমি বমি ভাব ও জ্বর আরোও বাড়িতে দিতে পারে।
  •         শরীরে যেন পানিশূন্যতা দেখা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবেঃ গলা শুকিয়ে আসা, জিহ্বা ও ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, বমিভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা ইত্যাদি পানি শুন্যতার লক্ষন। জ্বর ও পাতলা পায়খানা আক্রান্ত হলে এসবের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, অন্যথায় বিপদ ঘটতে পারে।
  •         মসলাদার খাবার ও ঘূমপান থেকে বিরত থাকাঃ এ সময় মসলাদার খাবার ও ঘূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
  •         অ্যান্টিবায়োটিকঃ জ্বর, পাতলা পায়খানা, পায়খানার সাথে রক্ত, প্রচুর পেট ব্যথা, মলত্যাগের সময় ব্যথা হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
  •         উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহনঃ উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন–  কলা, আলু ও ফলের রস খাওয়া যেতে পারে

 

শিশুদের জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

 

জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে শিশুকে খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে। খাবার স্যালাইন ঘরে না থাকলে পরিষ্কার ভাবে সঠিক নিয়ম মেনে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ঘরেই তৈরি করতে হবে খাবার স্যালাইন। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ও চালিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া ফলের রস, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, ভাতের মাড় ও কাঁচা কলার ভর্তা খাওয়াতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কখন জ্বর ও পাতলা পায়খানা আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেয়া উচিত। জ্বর ও পাতলা পায়খানা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে করা প্রাথমিক চিকিৎসাতে অবস্থার উন্নতি না হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত না হলে পানি শূন্যতা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। যেসব লক্ষন দেখলে রোগীকে জরুরীভাবে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে তা হলো-

  •         অনবরত পানির মতো পাতলা পায়খানা হতে থাকলে,
  •         স্যালাইন বা অন্য কোনো খাবার একেবারেই খেতে না পারলে,
  •         প্রসাবের পরিমান অনেক বেশি কমে গেলে।
  •         জ্বীব ও ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে,
  •         প্রচুর ক্লান্ত বোধ করলে,
  •         পানি শূন্যতা থেকে শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে,
  •         প্রচুর পেটে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হলে,
  •         শরীরের তাপমাত্রা শিশুদের ( ছয় বছরের কম বয়সী) ক্ষেত্রে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। প্রাপ্ত বয়স্কদের শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার উপরে হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।

জ্বর ও বমি হলে করণীয়

 

জ্বর ও পাতলা পায়খানা প্রতিরোধের উপায়

প্রতিকারের চেয়ে যেহেতু প্রতিরোধই উত্তম। তাই আমাদের জ্বর ও  পাতলা পায়খানা দ্বারা আক্রান্ত হবার আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক জ্বর ও পাতলা পায়খানা প্রতিরোধের উপায়গুলি-

  •         বিশুদ্ধ পানি পান করাঃ দূষিত পানি পান করা জ্বর ও পাতলা পায়খানার অন্যতম কারন। তাই সুস্থ্য থাকতে হলে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। নিয়মিত পানির ট্যাংক পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।
  •         স্বাস্থ্যকর পরিবেশঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্যেও জ্বর ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। তাই এসব রোগ প্রতিরোধের জন্যে স্বাস্থ্যকর ও পরিষ্কার পরিবেশে থাকা আবশ্যক।
  •         পরিষ্কার পরিছন্ন থাকাঃ নিয়মিত হাতের নখ কাটাতে হবে। কেননা নখের নিচে জমে থাকা ময়লা ও জীবানু স্বাস্থ্য ঝুকির কারন হতে পারে। তাই সুস্থ্য থাকতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  •         সাবান দিয়ে হাত ধুয়াঃ খাবার আগে এবং মলত্যাগের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ার অভ্যেস গড়ে তোলতে হবে। এই অভ্যাস আমাদের জ্বর ও পাতলা পায়খানা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
  •         সঠিক পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষনঃ খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। যাতে খাবারে মশা মাছি বসতে না পারে। বিশেষ করে গরমের দিনে খাবার দ্রুত নষ্ট হয় তাই এসময় সঠিক পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষন করতে হবে।
  •         ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলোতে সচেতন থাকাঃ বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। তাই এখানে বেশ দ্রুতই ঋতুর পরিবর্তন ঘটে।  ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলিতে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমন রোগ বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে বসন্ত ও শীত কালে জ্বর ও পাতলা পায়খানার মতো রোগ বেশি হয়। তাই এসময় বৃদ্ধ ও শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলো  চললে জ্বর ও পাতলা পায়খানা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

 

তথ্য সমন্বয় : উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button