লাইফস্টাইলহেলথ

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় – অতিরিক্ত চুল পড়লে যা করবেন

অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া সমাধান

সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক ঘন চুল! তবে একটা সময়ে এসে আমাদের এই ঘন চুলকেই হারিয়ে ফেলতে হয়! কেমন হবে, যদি এমনকিছু মাথানষ্ট টিপসের সন্ধান পাই, যেসব টিপস ফলো করাটাই হবে আমাদের চুল পড়া বন্ধ করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর উপায়! মনে রাখবেন, চুল রুক্ষ হয়ে গেলে কিংবা ঠিকমতো চুলের যত্ন নিতে না পারলে কোনোভাবেই চুল পড়া বন্ধ করা যাবে না। নিয়মিত যত্ন নেওয়ার পরেও যারা চুল পড়া বন্ধ করতে পারছেন না তাদের জন্যই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কিত আর্টিকেল। সুতরাং কোনো তথ্য মিস করতে না চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন।

 

সূচিপত্র

  • অতিরিক্ত চুল কেন পড়ে?
  • চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
  • নিয়মিত মাথার ত্বক ম্যাসেজ করুন
  • রসুনের রস ব্যবহার করুন
  • পেঁয়াজের রস ব্যবহার করুন
  • আমলার রস বা পাউডার ব্যবহার করুন
  • নিমের পেস্ট ব্যবহার করুন
  • গ্রিন টি ব্যবহার করুন
  • অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন
  • স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল পরিচালনা করুন
  • নিয়মিত ভিটামিন গ্রহণ করুন
  • মাথার ত্বকের বাড়তি যত্ন নিন
  • নারিকেল তেল ব্যবহার করুন

 

 অতিরিক্ত চুল কেন পড়ে?

 

চুল ঝড়ে পড়া সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত চুল কেন পড়ে তা সম্পর্কে।

বংশগত কারণ, হরমোনাল বিভিন্ন সমস্যা, বার্ধক্য, গর্ভকালীন সময়ের বিশেষ মুহুর্ত, ঔষধ সেবনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ইত্যাদিকে অতিরিক্ত চুল পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। তবে এই চুল ঝড়ে পড়ার সমস্যা মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত হারে কাজ করে থাকে।

 এবার চলুন জেনে নেয়া যাক চুল পড়া বন্ধ করার উপায়গুলো সম্পর্কে-

 

নিয়মিত মাথার ত্বক ম্যাসেজ করুন

হালকা গরম তেল দিয়ে আপনার মাথার ত্বক নিয়মিত ম্যাসাজ করার চেষ্টা করুন৷ এতে করে মাথার ত্বকে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত হবে৷ যা মাথার ত্বকের সংক্রমণ এবং খুশকি দূর করে চুল পড়ার সমস্যাকে পুরোপুরি কমিয়ে আনবে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, তেল হিসাবে নারিকেল তেলের ব্যবহারে সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যায়।

 

রসুনের রস ব্যবহার করুন

আমরা হয়তো সকলেই জানি, রসুন খাবার হিসাবে আমাদের জন্যে কতটা উপকারী। পাশাপাশি আমাদের এও জেনে রাখা উচিত যে চুল পড়ার অন্যতম সেরা ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবেও এই রসুনকে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ মাথায় রসুনের রস ব্যবহার করতে হলে আপনাকে রসুনের রস বের করে তা তুলোর বলের সাহায্যে মাথায় এপ্লাই করতে হবে। এই রস সারারাত আপনার মাথার ত্বকে রেখে দিলে আশা করি দ্রুত ফল পাবেন৷

 

আরো পড়ুন- কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

 

পেঁয়াজের রস ব্যবহার করুন

মাথার চুল ঝড়ে পড়ার সমস্যা থেকে বাঁচতে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন৷ মূলত পেঁয়াজের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। ফলে মাথার ত্বক সুস্থ থাকে এবং চুল পড়ার হার অনেক কমে আসে। রসুনের মতো পেঁয়াজের রসকে চুলে এপ্লাই করতে হলে পেয়াঁজের রস বের করে নিতে হবে এবং তা ৩০ মিনিটের মতো সময় ধরে মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।

 

আমলার রস বা পাউডার ব্যবহার করুন

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং এক্সফোলিয়েটিং বৈশিষ্ট্যযুক্ত আমলাকেও চুলের উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ ফল হিসেবে ধরা যায়। তাছাড়া আজকাল বাজারে চুলে এপ্লাই করার মতো রেডিমেড আমলার রস বা পাউডার কিনতে পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন- গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

 

চাইলে সে-সব ব্যবহার করতে পারেন৷ আর যদি কেনা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে নিজেই আমলা পেস্ট করে তা থেকে রস কালেক্ট করে নিতে পারেন। পাশাপাশি আমলা শুঁকিয়ে তা ব্লেন্ডারে গুঁড়া করে তৈরি করে নিতে পারেন হোমমেড আমলা পাউডার। এক্ষেত্রে চুলে এপ্লাই করতে হবে পাউডার বা রসকে লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে তবেই তা চুলে এপ্লাই করতে হবে।

 

নিমের পেস্ট ব্যবহার করুন

বাংলাদেশে সচরাচর সব বাড়িতেই নিমের গাছ থাকে। সুতরাং নিমকে বিশেষ করে নিম পাতাকে চুলের যত্নে কাজে লাগানোটা বেশ যুক্তিযুক্ত পয়েন্ট হতে পারে। চুলে নিমের পেস্ট এপ্লাই করতে হলে শুরুতে নিমের পাতা ধুঁয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর তা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে বা পাটায় পিষে তার সাথে মধু যোগ করতে হবে। সবশেষে মিশ্রণটি ১৫ মিনিট চুলে রাখার পর তা ভালোভাবে ধুঁয়ে নিতে হবে। নিমের এই পেস্ট আপনার চুলকে মজবুত এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলবে। ফলে চুলের ঝড়ে পড়ার হার পুরোপুরি কমে আসবে।

 

গ্রিন টি ব্যবহার করুন

আপনারা হয়তো গ্রিন টি পানের ব্যাপারে জানেন! তবে আপনি কি জানেন এই গ্রিন টি চুলেও এপ্লাই করে? গ্রিন টি দিয়ে আপনি চাইলে আপনার চুল এবং মাথার ত্বক ম্যাসেজ করতে পারেন। এই বিশেষ ধরণের ম্যাসেজ আপনার চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। গ্রিন টিকে চুলে এপ্লাই করতে হলে এক কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে ২ টি গ্রিন টি ব্যাগ ছেড়ে দিন অথবা গ্রিন টি পাওডার পানিতে ছেড়ে দিন। পরবর্তীতে তা ঠান্ডা করে সরাসরি চুল এপ্লাই করবেন।

 

অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন

মনে রাখবেন অ্যালোভেরা জেল ত্বক এবং চুলের জন্যে বেশ উপকারী। তাছাড়া এটি ব্যবহার করতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। এই বিশেষ ধরণের জেল গাছ থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি চুলে এপ্লাই করতে পারেন। অনেকের ক্ষেত্রেই মাথার ত্বকের সংক্রমণের কারণে চুল ঝড়ে পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল বিশেষভাবে কাজে আসতে পারে। তবে যারা অ্যালোভেরা জেলকে আঠালো ভেবে চুলে এপ্লাই করতে অস্বস্তিবোধ করেন তারা এই জেলের সাথে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

 

স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল পরিচালনা করুন

চুল পড়া এবং অন্যান্য প্রায় প্রতিটি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে কাজ করে অস্বাস্থ্যকর রুটিন ফলো করার বদঅভ্যেস। তাই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলে রাখা ভালো চুলের ঝড়ে পড়া সমস্যাকে বাড়াতে এপিনেফ্রিন এবং কর্টিসল নামের দুটি হরমোন মারাত্মকভাবে কাজ করে থাকে। এসব হরমোনকে মূলত স্ট্রেস হরমোন বলা হয়। আর এসব হরমোন সৃষ্টির পেছনে কাজ করে অস্বাভাবিক এবং অস্বাস্থ্যকর লাইফ রুটিন ফলো করার বদঅভ্যাস।

 

আরো পড়ুন- গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

 

স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল পরিচালনার অংশ হিসাবে ধুমপানের পরিমাণ কমিয়ে এনে তার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফল খেতে পারেন। পাশাপাশি রাত জাগার অভ্যাস দূর করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত পরিমাণে ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন এবং মানসম্মত ডায়েট চার্ট ফলো করুন। আর হ্যাঁ! প্রতিদিনকার রুটিনে অবশ্যই ব্যায়ামের জন্যে বাড়তি সময় রাখার চেষ্টা করবেন। আশা করি আপনার স্বাস্থ্যকর চুল আর কখনোই ঝড়ে পড়ার সমস্যায় পড়বে না।

 

নিয়মিত ভিটামিন গ্রহণ করুন

কোনোভাবেই যদি চুলের ঝড়ে পড়ার সমস্যা দূর করা না যায় সেক্ষেত্রে আপনার ভিটামিনের অভাব আছে কিনা তা চেক করতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। আর যদি সত্যিই ভিটামিনের অভাব থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেই অভাব পূরণের চেষ্টা করতে হবে।

 

কারণ ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই, জিঙ্ক ও আয়রনের মতো কিছু ভিটামিন এবং খনিজ আপনার চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের ঝড়ে পড়ার হারকেও প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করুন।

 

মাথার ত্বকের বাড়তি যত্ন নিন

যারা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকেন তারা দ্রুত এটি ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করুন। কারণ গবেষণা বলছে হেয়ার ড্রায়ার চুলের ঝড়ে পড়ার সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলে৷

 

পাশাপাশি চুলের স্টাইল করার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে টাইট খোঁপা বা বিনুনি না বেঁধে হালকা করে খোঁপা করুন। যাতে করে চুলের গোড়ায় বাড়তি টান না পড়ে। প্রতিদিন যদি গোসল করা সম্ভব না হলেও মাথা ধোঁয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকুন। প্রতিদিন অন্তত ১ বার মাথার চুল ধুঁয়ে ফেলুন এবং সপ্তাহে ১ বার চুলে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

 

নারিকেল তেল ব্যবহার করুন

গ্রুমিং এবং আল্ট্রাভায়োলেট (UV) আলোর সংস্পর্শে চুলের ক্ষতি রোধ করতে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন৷ পাশাপাশি নারিকেল তেলে পাওয়া লরিক অ্যাসিডকে চুলের প্রোটিনের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন৷ তাছাড়া মাথায় রাখতে হবে, মাথার ত্বকে নারকেল তেল ম্যাসাজ করলে মাথার রক্তের প্রবাহ ভালো হয়। সুতরাং দামী দামী তেলের প্রতি না ঝোঁকে সাধারণ নারিকেল তেল ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন৷

 

ইতি কথা

উপরোক্ত টিপসগুলি যারা নিয়মিত ফলো করতে পারবেন, আশা করি তাদের চুল পড়ার হার অনেক কমে আসবে। আর হ্যাঁ! চুলে মাত্রাতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে ন্যাচারাল টেকনিকে চুলের যত্ন নিতে শিখুন। আশা করি দ্রুত আপনার চুল হয়ে উঠবে সুন্দর এবং হেল্থি। পুরো আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

 

তথ্য সমন্বয় – উইকিপিডিয়া

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button