হবু মায়েদের কাছে নিজের গর্ভাবস্থার ব্যাপারটি নিয়ে অনেক কনফিউশন থাকে। অনেকেই হয়তো বুঝে ফেলার ক্ষমতা রাখে। তবে বেশিরভাগ নতুন গর্ভবতী নারীরা বুঝতে পারে না তারা আদৌ গর্ভবতী কিনা। এক্ষেত্রে যদি আগে থেকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকে সেক্ষেত্রে ব্যাপারটি নিয়ে সকল কনফিউশন দ্রুত দূর করা সহজ হয়। যাইহোক! চলুন এবারের আর্টিকেলে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এবং গর্ভবতীর যত্ন নেওয়ার সঠিক গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্র
- গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি কি কি?
- গর্ভবতীর যত্ন নেওয়ার সঠিক গাইডলাইনগুলি কি কি?
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন
- সবসময় নিজেকে পরিষ্কার রাখুন
- হাইড্রেট থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
- ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন
- সামাজিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন
- প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন সম্পর্কে ধারণা রাখুন
- রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলুন
- গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হবে?
- গর্ভাবস্থায় কোন বিষয়গুলিকে এড়িয়ে যেতে হবে?

Image by wirestock on Freepik
Table of Contents
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি কি কি?
কোনো কারণে যদি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলির সাহায্য নিতে পারেন। চলুন তবে শুরুতেই আমরা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিই:
মাঝেমধ্যেই তলপেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে
এই পয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আপনাকে নিজের শরীরের কন্ডিশন সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে কিংবা আগে থেকেই পেটের ব্যাথা-জনিত সমস্যা থাকে তবে এই পয়েন্ট টি আপনি স্কিপ না করলেও পুরোপুরি আমলে নিবেন না।
যাইহোক! প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যাথা হওয়ার বিষয়টিকে ইমপ্লান্টেশন ক্র্যাম্পস বলা হয়ে থাকে। এই ইমপ্লান্টেশন ক্র্যাম্পস পিরিয়ড ক্র্যাম্প থেকে কিছুটা আলাদা অনুভূত হবে। সুতরাং দুটো ব্যাথাকেই গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা একেবারেই থাকবে না।
এই ধরণের তলপেটের ব্যাথায় আপনি হালকা থেকে মাঝারি ঝাঁকুনি, কেটে ফেলার ব্যাথা কিংবা টান অনুভব করবেন। যা পুরোপুরি অস্বাভাবিক মনে হবে। এই ধরণের সমস্যা আবার কয়েকদিন থেকে নির্মুলও হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ সবসময় থাকে না! এই বিষয়টিকেও মাথায় রাখবেন।
ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
কোনো নারী গর্ভবতী কিনা তা বুঝবার অন্যতম একটি উপায় হলো ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করা। কারণ এই লক্ষণটি কোনো নারীর গর্ভাবস্থা জানান দিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। ব্যাপারটিকে আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি! আপনার পরবর্তী পিরিয়ড হওয়ার সময় আপনি যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাথরুমে যান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো উচিত।
যদিও লজিক্যালি আপনি দিনে কতবার প্রস্রাব করেন তা পানি পানের উপর প্রস্রাবের মাত্রা নির্ভর করবে। তবে পানি অতিরিক্ত পরিমাণে না করেও যদি বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া কিংবা প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা জরুরি।
এভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রস্রাবের বেগ আসার কারণ হলো গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এই বাড়তি রক্ত আপনার কিডনিকে ফিল্টার করতে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে এবং ফলস্বরূপ আরও বেশি দেহ থেকে বর্জ্য বের হতে থাকে। সবশেষে বিভিন্ন শারিরীক প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে এই বর্জ্য প্রস্রাব হিসেবে দেহ থেকে বেরিয়ে আসে।
বমি বমি ভাব বা বমির সমস্যা দেখা দেওয়া
বমির সমস্যা কিংবা বমি বমি ভাব কাজ করা গর্ভবতী রোগীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন লক্ষণ। যার মাধ্যমে মেক্সিমাম গর্ভবতী রোগীকেই চিহ্নিত করা হয়। মূলত সকালের অসুস্থতা গর্ভাবস্থার সমস্ত লক্ষণগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত লক্ষ্মণ হিসাবে কাজ করে। আর সকালের এই অসুস্থতায় গর্ভবতী রোগীর বমি বমি ভাব তৈরিতে বাজে প্রভাব তৈরি করে।
এই উপসর্গটি গর্ভধারণের দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে। যা গর্ভাবস্থার চতুর্থ সপ্তাহের কাছাকাছি কিংবা আপনি গর্ভবতী হলে আপনার মাসিক মিস করার সময়ে বিশেষভাবে দেখা দিতে পারে।
ফোলা বা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দেখা দিতে পারে
শুরুতেই বলে রাখি, আপনাকে মনে রাখতে হবে ফোলা বা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ মানবদেহের যেকোনো পর্যায়ে দেখা দিতে পারে। তবে একজন নারী গর্ভবতী কিনা তা বোঝার ক্ষেত্রেও এই ফোলা বা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দারুণভাবে কাজ করে। মোটকথা আমরা সকলেই সময়ে সময়ে ফোলাভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করি।
তবে উভয়ই গর্ভাবস্থায় বেশ সাধারণ লক্ষণ হিসাবে কাজ করে। এক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল হরমোনগুলিই অপরাধী হিসাবে কাজ করে৷ প্রথম দিকে, ফোলাভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্য হালকা হলেও সময়ে সময়ে তা বেড়ে যেতে পারে।
মেজাজ পরিবর্তিত হয়ে যায়
আপনি যদি গর্ভবতী হন, আপনার মেজাজের যে কোনও পরিবর্তন আপনার অবশ্যই নজর এড়াবে না। অন্যদিকে ক্লান্তি বা বমি বমি ভাবের মতো অন্যান্য লক্ষণগুলির সাথে এই পরিবর্তিত মেজাজ মিলে গেলে মেজাজের ধরণ হয়ে উঠবে বেশ রুক্ষ! আপনি আরও সংবেদনশীল বা আবেগে মন খারাপবোধ করতে পারেন।

Image by Freepik
গর্ভবতীর যত্ন নেওয়ার সঠিক গাইডলাইনগুলি কি কি?
এবার আসি গর্ভবতীর যত্ন নেওয়ার সঠিক নিয়ম কিংবা গাইডলাইনের ব্যাপারে। মনে রাখবেন, একজন গর্ভবতী হিসাবে আপনাকে আপনার যত্ন নিতে জানতে হবে। সেক্ষেত্রে আশেপাশের মানুষজনের সাহায্যেরও প্রয়োজন পড়বে। তবে নিজের যত্ন নিজে নিতে জানলে পুরো বিষয়টি বেশ অর্থবহ হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে নিজের যত্ন নিজে নেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের পয়েন্টগুলিতে ফোকাস করুন:
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন রাতে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমাতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে রাতে যদি আপনি ঘুমের ব্যাঘাতজনিত সমস্যায় ভুগেন সেক্ষেত্রে দিনের বেলায় ঘুমিয়ে ঘুমের অভাবটুকুকে পুষিয়ে নিতে পারেন৷
মনে রাখবেন এই সময়টুকুতে নিজের জন্যে যতটুকু সময় পাচ্ছেন, হয়তো বাচ্চা জন্মাদানের পর ততটুকু সময়ও পাবেন না।
তাছাড়া মা এবং শিশু দুইজনই সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজনীয়তা পূরণে আপনি চাইলে ঘুমাতে পারেন, প্রার্থনা করতে পারেন, ক্রিয়েটিভ কোনো হালকা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন৷ তাছাড়া রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে প্রতি আধ ঘণ্টায় ঘুম থেকে উঠে হাঁটার চেষ্টা করতে পারেন।
২. সবসময় নিজেকে পরিষ্কার রাখুন
গর্ভকালীন সময়ে সবসময় নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। এর অনেক সুফল রয়েছে। যেমন ঘন ঘন হাত ধোয়া আপনাকে গ্রুপ বি স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ফিফথ ডিজিজ, সাইটোমেগালোভাইরাস এবং চিকেনপক্সের মতো সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।
নতুবা এসমস্ত রোগ আপনার শিশুর জন্মগত ত্রুটি এবং অন্যান্য গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। সুতরাং শুরু থেকেই যত্নবান হওয়া উচিত। এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ইথাইল অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
৩. হাইড্রেট থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
অনেকেই মনে করে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত নয়। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। এই সময়টাতে আপনি পানি পান করতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।
বরং হাইড্রেট থাকতে এই সময়টাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করা জরুরি৷ দিনে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করবেন। এতে করে বাচ্চা এবং মা দুইজনই সুস্থ থাকবেন।
এতে করে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগ, ইউটিআই, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ফোলা এবং অন্যান্য অস্বস্তিকর রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সহজ হবে।
৪. ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন
গর্ভকালীন সময়ে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করা জরুরি। সেই সাথে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবারের সাথে পাঁচ বা ছয়টি সুষম খাবার খেতে হবে।
কমলালেবু এবং কমলার রস ফোলেড সমৃদ্ধ খাবারের মাঝে থাকা অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ খাবার। সুতরাং খাবার তালিকায় নিয়মিত ১ টি কমলালেবু রাখতে পারেন৷ মনে রাখবেন ফলিক অ্যাসিড শিশুর নিউরাল টিউবের সঠিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং ফলিক এসিডের ভালো সোর্স আছে এমন খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা জরুরি। তাছাড়া নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য অত্যাবশ্যক এই খাবার একজন গর্ভবতী মাকেও শারিরীকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে।
৫. সামাজিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন
এখানে সামাজিক সম্পর্ক বলতে পারিবারিক এবং বন্ধুত্বের সম্পর্কসহ আত্মীয়তার সম্পর্ককেও বোঝানো হয়েছে। তবে টক্সিক সম্পর্কগুলিকে এই সময়টাতে গুরুত্ব না দেওয়ায় ভালো। এতে করে মানসিক চাপ বাড়বে এবং এই বাড়তি মানসিক চাপ অনাগত শিশুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
তবে নিজেকে হালকা রাখার জন্য এবং নিজের মনকে ভালো রাখার জন্য সকলের সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করবেন।
৬. প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন সম্পর্কে ধারণা রাখুন
আপনি কি জানেন প্রতিটি গর্ভবতী নারীর প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি? অকাল প্রসবের জন্য আপনার দেহে ঝুঁকি বাড়াতে পারে এই প্রি-বার্থ ডিপ্রেশন বা প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন।
আপনি যদি বুঝতে পারেন যে নিজের এমন কার্যকলাপে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, যা আপনি সাধারণত উপভোগ করেন কিংবা আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণে ঘুমান সেক্ষেত্রে বুঝে নিবেন আপনার মাঝে প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে মনোবল এবং ভালো থেরাপির প্রয়োজন।
৭. কখন ডাক্তারকে কল করতে হবে তা জানুন
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়া মানেই অনেক ফলস ইস্যুর মুখোমুখি পড়া। যেমন ফলস পেইন কিংবা কঠিন কোনো সমস্যা। এক্ষেত্রে কোন সমস্যাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে কিংবা কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে সে-সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
এক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের ব্যথা দেখা দিলে, শক্তিশালী ক্র্যাম্পের মুখোমুখি হলে, প্রতি ২০ মিনিটের ব্যবধানে পেট সংকোচিত হলে, যোনিপথে রক্তপাত বা তরল বের হলে, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দিলে, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা অনুভব করলে, হৃদস্পন্দনজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে, অবিরাম বমি বমি ভাব এবং প্রচুর পরিমাণে বমি হলে হাঁটতে সমস্যা হলে কিংবা শোথ অর্থ্যাৎ জেন্ট ফুলে গেলে অথবা অনাগত শিশুর কার্যকলাপ হ্রাস পেলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৮. রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলুন
যেকোনো রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন যেকোনো রাসায়নিক পদার্থ কিন্তু একটি বিকাশমান ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে। এক্ষেত্রে মানব ভ্রূণ অনেক বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।
সুতরাং আপনার বাড়িতে, কর্মস্থলে গর্ভকালীন সময়ে কোনো রাসায়নিক পদার্থ রাখবেন না। অন্তত গর্ভকালীন সময়ে এবং নবজাত বেড়ে উঠার সময়ে এসব পদার্থকে ঘরে ঠাঁই দেওয়া থেকে বিরত থাকুন৷

Image by rawpixel.com on Freepik
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হবে?
গর্ভকালীন সময়ে খাবারের দিকটা সঠিকভাবে মেইনটেইন করা জরুরি। যেহেতু আপনার সাথে ৯/১০ মাস ধরে আরো একটি জীবন বেড়ে উঠবে সেহেতু পুষ্টির দিকটা প্রতি সর্বোচ্চ সচেতন থাকা জরুরি। চলুন তবে আর্টিকেলের এই অংশে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হবে সে-ব্যাপারে জানা যাক।
মিষ্টি আলু
বাঙালিদের কাছে মিষ্টি আলু বেশ কমন একটি খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। মোটামুটি প্রতিটি পরিবারই এই খাবার এফোর্ট করতে পারে। তাছাড়া মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা পরবর্তীতে আপনার শরীরে ভিটামিন A-তে রূপান্তরিত হয়।
এক্ষেত্রে ভিটামিন এ শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান হিসাবে কাজ করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি আলু খেলে বা সারাদিন মিষ্টি আলু খেলে তা দেহের অর্গান মিট, যা উচ্চ পরিমাণে বিষাক্ততার কারণ হতে পারে।
ডিম
ডিম গর্ভকালীন সময়ে বেশ উপযোগী একটি খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পুষ্টির সামান্য অংশ এই ডিমে থাকেই।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে একটি বড় ডিমে প্রায় ৮০ ক্যালোরি, উচ্চ মানের প্রোটিন, চর্বি এবং অনেক ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। যা একটু ভ্রূণকে সুস্থরূপে শিশুতে পরিণত করতে এবং সেই শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে যথেষ্ট।
এছাড়াও ডিম হলো কোলিনের একটি বড় উৎস। যা গর্ভাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হিসাবে কাজ করে। এই কোলিন উপাদান একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার পাশাপাশি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের বিকাশজনিত অস্বাভাবিকতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
চর্বিহীন মাংস এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার
চর্বিহীন গরুর মাংস, মুরগির মাংস হলো উচ্চ মানের প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। সুতরাং গর্ভবতী নারীকে সুস্থ রাখতে এই আয়রন, কোলিন এবং অন্যান্য বি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি নিয়মিত খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
মনে রাখবেন গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এবং মাঝামাঝি সময়ে আয়রনের কম মাত্রার কারণে আয়রনের ঘাটতির ফলে অ্যানিমিয়া হতে পারে। এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে চর্বিহীন মাংস এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণে সতর্ক হোন।
কমলালেবু এবং গোলমরিচ
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে কমলালেবু এবং গোলমরিচ বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে কমলালেবু বা গোলমরিচের সাথে আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার মিশিয়ে রেসিপি তৈরি করে খেতে পারেন।
এছাড়াও মুরগির মাংস বা গরুর মাংসের রেসিপিতে কিছু ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ টমেটোর টুকরো বা কমলালেবুর রস কিংবা গোলমরিচের গুঁড়া ছেড়ে দিতে পারেন। এতে করে ভিটামিন সি এবং আয়রনের কম্বিনেশন পুষ্টির দিকটাকে আরো উন্নত করবে।
ড্রাই ফ্রুটস
আজকাল অনলাইনের বিভিন্ন পেইজে ড্রাই ফ্রুট সেল হয়। তাছাড়া পাশের দোকানেই এসব খাবার পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় ড্রাই ফ্রুট গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের জোগাড় করে মাতৃদেহে। সুতরাং গর্ভবতী নারীর খাদ্য তালিকায় ড্রাই ফ্রুটের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
চাইলে আপনি ঘরে বসে নিজে নিজেই এই ড্রাই ফ্রুট তৈরি করে নিতে পারেন। টেকনিক জানতে গুগলিং করুন কিংবা ইউটিউবের সাহায্য নিন।
পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানি
গর্ভবতী প্রতিটি নারীর উচিত বেশি বেশি পানি পান করা। শুধুমাত্র গর্ভকালীন সময়েই নয়, আমাদের সবাইকে সবসময় হাইড্রেটেড থাকতে হবে।
তাছাড়া এই পানি গর্ভাবস্থায়, রক্তের পরিমাণ প্রায় ৪৫ শতাংশ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। আর আপনার দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকলে আপনার শরীর আপনার শিশুকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান না করে আপনি নিজেই ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে তা আপনার অনাগত শিশুর উপরেও বাজে এফেক্ট ফেলবে।
শস্য জাতীয় খাবার
শস্য জাতীয় খাবার গর্ভবতী নারীকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে৷ এসব খাবার সাধারণ ফাইবার, ভিটামিন এবং উদ্ভিদ যৌগ দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে।
শস্য জাতীয় খাবারে মধ্যে ভুট্টা, ভাত, বাদামি চালের ভাতসহ অন্যান্য খাবার বেশ জনপ্রিয়। যা সবসময়ই পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় কোন বিষয়গুলিকে এড়িয়ে যেতে হবে?
আর্টিকেলের এই অংশে চলুন আমরা এমনকিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখি যা গর্ভাবস্থায় পুরোপুরি ইগনোর করা উচিত।
- যেকোনো গৃহস্থালীর কাছে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন
- খুব বেশি পরিমাণে ন্যাপথালিনের সংস্পর্শ আসা থেকে বিরত থাকুন
- ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি থেকে বাঁচতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি রাখার স্থান থেকে দূরের থাকুন
- হাঁটা বা সাঁতার কাটা কিংবা অন্য যেকোনো ব্যায়াম ৩০ মিনিটের বেশি করা থেকে বিরত থাকুন
- এই সময়ে ভারী কোনো ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা উচিত
- অ্যালার্জির বিভিন্ন ধরণের ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন
- এই সময়ে যেকোনো স্প্রে বিশেষ করে হাঁপানি রোগের স্প্রে ব্যবহারের সতর্ক থাকতে হবে
- মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল জাতীয় যেকোনো খাবারই ঝুঁকিপূর্ণ
- চুলের রঙয়ে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় গর্ভাবস্থায় আপনাকে চুলে রঙ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
ইতি কথা
আশা করি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি কি কি হতে পারে এবং গর্ভবতীর যত্ন নেওয়ার সঠিক গাইডলাইনটি ঠিক কেমন হবে সে-সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আসুন আমরা গর্ভবতী নারীর প্রতি যত্নশীল হই। তাদের যত্ন নিই এবং তাদের ভালো থাকার বিষয়টিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিই। পুরো আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।