কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। এটি রেচনতন্ত্রের অংশ। আমাদের দেহ থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করা এর মূল উদ্দেশ্য। অঙ্গ থাকলেই তাকে ধরাশায়ী করার মতো অসুখ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিডনিরও এরকম কিছু রোগ হয়ে থাকে। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। আসলে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানলেই যে শুধু আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন তা নয়।কিডনি রোগ এড়াতে আপনাকে সেই অনুযায়ী লাইফস্টাইল গড়ে তুলতে হবে। আসুন জেনে নেয়া যাক কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যাবলী:
Table of Contents
কিডনির কী কী রোগ হতে পারে?
উত্তর:কিডনি রোগ সাধারণত দুই প্রকার। একটি অ্যাকুইট এবং অন্যটি ক্রনিক।
অ্যাকুইট কিডনি ইনজুরি (AKI)
অ্যাকুইট কিডনি ইনজুরি (একেআই) হলো একটি স্টেজ ওয়ান কিডনি রোগ যা সাময়িক সমস্যা হিসাবে গণ্য করা হয়। ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ব্লাড লস এইসব কারণে আমাদের কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে আবার নষ্টও হতে পারে।১৫ থেকে ২০ শতাংশ কিডনি রোগের কারণ হয় অতিরিক্ত ব্যাথানাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের গ্রহণ।আপনার ডায়রিয়া,ব্লাড লস হওয়ার পর দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা নিলে কিডনি আবার ভালো অবস্থানে ফিরতে পারে। আর চিকিৎসা গ্রহণ না করলে কিডনি স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একটি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হিসাবে গণ্য হয়। ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার এবং গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস বা কিডনির প্রদাহ হলো এই রোগের বেশ কিছু চিহ্নিত কারণ। বংশগত বা জন্মগত অসুখ(জেনেটিক) যেমন পলিসিস্টিক কিডনি রোগ থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কিডনির অসুখ বা সিকেডি হতে পারে। আবার মাতৃগর্ভে কিডনির গঠনগত অস্বাভাবিকতার জন্যও হতে পারে সিকেডির মতো জটিল রোগ। এখন আসি এই রোগের কারণ কী কী।
এই রোগের মূল শক্তিশালী অংশ হলো, কোনো রকম লক্ষণ প্রকাশিত হবেনা অথচ ধীরে ধীরে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং রোগের শেষ পর্যায়ে অসুস্থতা প্রকাশ পাবে। কিডনি রোগের কিছু লক্ষণ হলো—শারীরিক দুর্বলতা, খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন ইত্যাদি। সিকেডিতে আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব হয় না, তবে রোগের জটিলতা থেকে রোগীকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। পরিপূর্ণভাবে কিডনি নষ্ট হলে ডায়ালাইসিস, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে হয়।

Image by upklyak on Freepik
কিডনি রোগের লক্ষণ
৪০ বছর বয়স হওয়ার পর রুটিন চেকাপ হিসাবে প্রত্যেকের ই উচিত বছরে একবার ব্লাড প্রেশার, ডায়বেটিস, রক্তের কোলেস্টেরল এবং ইউরিন টেস্ট করানো।প্রস্রাবে প্রোটিন এবং সুগারের উপস্থিতি কতটা সেটি নির্ণয় করার জন্য ইউরিন টেস্ট করাতে হয়।
এ ছাড়া কিডনির কর্মক্ষমতা দেখার জন্য ব্লাডের সবরকম পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।গবেষণায় দেখা গিয়েছে,ব্লাড প্রেশারের রোগীদের ১০০ জনে ৩২ জন ই জানেন না যে তিনি এই সমস্যায় আক্রান্ত। আবার জানা থাকলেও অর্ধেক মানুষেরই হয়তো ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে নেই বা তারা চেষ্টাই করেন না।শেষ পর্যন্ত মোট রোগীর ম ২৫ শতাংশ পারেন ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে কিডনি রক্ষা করতে।আবার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের জানা নেই যে তারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু এই রোগগুলোর উপস্থিতি থাকার কারণে রোগীর কিডনি ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ছে।কিছু কিডনি রোগের লক্ষণ জানা থাকলে মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন হবে।সেগুলোই আলোচনা করা হলো-
মাংসপেশিতে টান লাগা
কিডনির রোগের কারণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্যহীনতা হয়ে থাকে। এতে মাংসপেশিতে টান লাগে ও খিচুনির সমস্যা হতে পারে।তাই মাংসপেশিতে টান লাগলে স্বাভাবিকভাবে নিলেও সতর্ক থাকবেন। খাবারে দীর্ঘদিন অরুচি ও বমিভাব থাকলে জানবেন এগুলোও কিডনি রোগের প্রধান লক্ষণ।
ত্বকের রঙ পরিবর্তন
কিডনি শরীর থেকে ঠিকমতো বর্জ্যপদার্থ অপসারণ করতে না পারলে ত্বকে প্রভাব পড়ে।আমাদের শরীরের ইউরিয়া বের হতে না পারায় সেগুলো ত্বকের নিচে জমা হতে থাকে। তখন র্যাশ হয়, ত্বকের রঙ পরিবর্তিত হয়ে যায় আবার খসখসে হয়ে ফুসকুড়ি হতে পারে। যাদের চর্মরোগ আছে তারা অসতর্ক থাকলে সমস্যায় পড়বেন কারণ এগুলো একইসাথে চর্মরোগেরও লক্ষণ।তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
ক্লান্তি অনুভব করা
নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সবসময় ক্লান্তি, দুর্বল অনুভব করা, ওজন কমে যাওয়া এরকমহতে থাকলে কিডনির টেস্ট করান। কিডনি ঠিক মতো কাজ না করলে রক্তস্বল্পতা হয় এই কারণে ক্লান্তিভাব দেখা দিতে পারে।
গায়ে ফোলা ভাব–
কিডনি শরীর থেকে সঠিক পরিমাণে পানি নিষ্কাশন করতে না পারলে তখন তা শরীরে জমে গিয়ে ফোলাভাব দেখা দেয় গায়ে।বিশেষ করে চোখের নিচে, পায়ের গোড়ালি ও হাতে ফোলা ভাব লক্ষণীয়। একটু বেশি ঘুমালে বা অ্যালার্জির জন্যও অনেকের গা ফুলে যায়।তবে এই ফুলে যাওয়ার সাথে কিডনির অসুখে ফোলার পার্থক্য হচ্ছে এর স্থায়িত্ব। কিডনি রোগের জন্য ফুলে যাওয়া অনেকদিন থাকে ও ক্রমাগত বাড়ে।যদি চোখের নিচে, পায়ের গোড়ালিতে ফোলাভাব এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ ধরে হয় তাহলে সেটা কিডনির রোগের কারণেই হয় সাধারণত।
শোয়ার সময় শ্বাসকষ্ট –
কিডনি সঠিক পরিমাণে পানি নিষ্কাশন না করলে ফুসফুসে পানি জমে যায়।আর শুয়ে থাকলে বক্ষ প্রসারণ কমে পানি জমে যাওয়ার জন্য শ্বাস নিতে খুব অসুবিধা হতে পারে।এজন্য আপনি ঘুমের সমস্যাতেও ভুগতে পারেন।
কিডনি ব্যাথা কোথায় হয়

Image by Lifestylememory on Freepik
অনেকে কোমরে সামান্য ব্যাথা হলেই ভয় পেয়ে বসেন যে না জানি কিডনির কী হলো! যেকোনো কারণেই এমন ব্যাথা হতে পারে।মাসলের অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়াও তার কারণ। তবে কিডনি রোগের জন্য যে ব্যথা হয় তা পারতপক্ষে মেরুদণ্ড থেকে সামান্য দূরে ডান অথবা বাম দিকে।পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে ব্যাথা অনুভূত হলে সেই ব্যাথাকে কিডনির ব্যাথা বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।এই ব্যথা Transformable অর্থাৎ জায়গা পরিবর্তন করে কোমরের দুই পাশেও যায়।শোয়া,বসা,দৈনন্দিন কাজে খুব ব্যাঘাত ঘটায় এগুলো। কিডনি ব্যাথা কোথায় হয় জেনে তো নিলেন।এবার কিডনি ব্যাথা কোথায় হয় সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করুন।
কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয়
কিডনির সুস্থতা জানানোর জন্য যে পয়েন্ট তা আসলে ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ। এই ক্রিয়েটিনিন কী?
মানবদেহের খাদ্যগ্রহণের পর যে রাসায়নিক বর্জ্য জমা হয় তা ই হলো ক্রিয়েটিনিন। এই ক্রিয়েটিনিন মূলত ক্রিয়েটাইন নামক একটি রাসায়নিকের আকারে শরীরে অবস্থান করে।প্রথমে রক্তের নালীতে প্রবেশ করে ছড়ায় পরে কিডনিতে পরিশ্রুত হয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে পড়ে।ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়লে শরীরে যে সমস্যা দেখা দেয় তা মূলত কিডনির ই রোগ।কারণ কিডনিই এই বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে আমাদের দেহকে সুস্থ রাখে। ক্রিয়েটিনিন পয়েন্ট বা কিডনির পয়েন্ট মানুষ থেকে মানুষে ভিন্ন রকম। কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় চলুন জেনে নিই।
ক্রিয়েটিনিনের সাধারণত যে পয়েন্ট তা হলো–
- প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ : 0.6 – 1.2 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL)
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী : .0.5 – 1.1 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL)
- কিশোর-কিশোরী : 0.5 – ১ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার(mg/dL)
- শিশু: 0.3 – 0.7 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL)
যখন এই পয়েন্টগুলো 6 থেকে ১০ mg/dL হয়ে যায়, বুঝতে হবে কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
কিডনি ভালো আছে কীনা বোঝার উপায় হিসাবে বেশ কিছু টেস্ট আমরা গ্রহণ করতে পারি।যেমন ক্রিয়েটিনিন টেস্ট। ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর কিছু রেঞ্জ আছে যা হেলদি কিডনি নির্দেশ করে। স্বাভাবিক রেঞ্জ কিডনিতে আছে কীনা তা রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করে বোঝা হয়।যেমন সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট। এটি সঠিক মাত্রায় থাকলে বুঝতে হবে কিডনি ঠিক আছে। তবে কিডনি হেলদি আছে কীনা শুধু এটা বোঝার জন্য ই যে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট হয় তা নয়। চিকিৎসকরা অনেকসময় রোগীর পুরোপুরি স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝতে রুটিন চেকাপ হিসাবে রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করেন। কারণ দেখা গেছে শুধু কিডনির জন্য ই নয় বরং শরীরের বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন – ডায়বেটিস, হার্ট স্ট্রোক, অধিকব্লাড প্রেশার, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ এইগুলোর জন্যেও রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল বাড়ন্ত থাকে।তাই কিডনি ভালো আছে কী না বোঝার পাশাপাশি এই উপায়টি শরীরের অন্য অর্গানের ব্যাপারেও তথ্য জানায়।
আরো পড়ুন- গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
কিডনি ভালো আছে কীনা বোঝার আরও একটি উপায় হলো প্রস্রাবের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক চেকাপ করা।মূত্রের সাথে প্রোটিন বা অ্যালবুমিন নির্গত হওয়া কিডনি রোগের বড় একটি লক্ষণ। কিডনি ভালো থাকলে এই লক্ষণ থাকবেনা। অনেক সময় এর পরিমাণ খুবই কম থাকা তাই সাধারণ রুটিন প্রস্রাব টেস্টে ধরা পড়তে চায় না।তখন করা হয় মাইক্রো অ্যালবুমিন টেস্ট। আবার প্রয়োজন হলে ডাক্তার ২৪ ঘণ্টার জমানো প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ পরীক্ষা করতে পারেন। তাতেও কিডনি ভালো আছে কীনা বোঝা যায়।
কিডনির সক্ষমতা বুঝতে আরও একটি উপায় হলো রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ টেস্ট করা।কিডনি বিকল হলে এই উপাদানটি বেড়ে যায় আর কিডনি ভালো থাকলে স্বাভাবিক থাকে।
CMP বা কম্প্রিহেন্সিভ মেটাবলিক প্যানেল টেস্ট এর মাধ্যমে রক্তের ১৪ টি উপাদানের মাত্রা দেখা হয়। যেমন -গ্লুকোজ, প্রোটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম,অ্যালবুমিন, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদির উপস্থিতির মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
রক্তের এই টেস্টটি করার পর যদি পরিলক্ষিত হয় যে রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি তখন ডক্টররা কিডনির অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে রোগীর অন্য উপসর্গ অনুযায়ী চার ধরনের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট একটি বা একাধিক করতে পরামর্শ দেন।চারটি টেস্ট হলো-
১. ব্লাড বা সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট
২. ইউরিন ক্রিয়েটিনিন টেস্ট
৩. ক্রিয়েটিনিন কাইনেজ টেস্ট
৪. ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স টেস্ট
এই চারটি টেস্ট করে কিডনি ভালো আছে কীনা বোঝা যায়।
টেস্টে ক্রিয়েটিনিন লেভেল নরমালের চেয়ে সামান্য বেড়ে গেলে চিন্তা করবেন না।এমন বেড়ে যাওয়া মানেই যে আপনার কিডনি খারাপ হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কোনো দরকার নেই।বিভিন্ন কারণে রক্তে এমন ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন-টেস্ট এর আগের কয়েকদিন আপনি নিয়মিত এক্সারসাইজ করতেন বা অনেক পরিশ্রমের কাজ করে ফেলেছেন।তাতে এমন অবস্থায় ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ আপনার পেশিতে অনেক বেশি ক্রিয়েটিন ব্যবহৃত হয়েছিল এক্সারসাইজ কিংবা কাজ করতে।অনেক বেশি পরিমাণ ক্রিয়েটিনিন যখন অল্প সময়ে শরীরে তৈরি হয়েছে, তা এখনো শরীর থেকে বের হতে পারেনি। টেস্টের আগে নিয়মিত বেশি পরিমাণ সামুদ্রিক খাবার যেমন সুশি,রেড মিট খেলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন সাময়িক বেড়ে যায়।কিছু কিছু মেডিসিন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যেমন- এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট, এন্টিবায়োটিক।তাই ক্রিয়েটিনিন বাড়লেই কিডনি খারাপ হয়েছে তা নয়।তবে কিডনি ভালো আছে কীনা তা অনেকাংশেই এর মাধ্যমে জানতে পারবেন।
শরীর যদি যথেষ্ট সতেজ অনুভব করেন তাহলে আপনি সুস্থ ই আছেন।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
শরীরের বাড়তি উপাদানগুলো বেশি থেকে গেলে বা মূত্র এর পরিমাণ কম বেশি হলে বুঝতে হবে কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে না। কিডনিতে সমস্যা হচ্ছে বলেই কার্যক্ষমতা কমে আসছে, উপাদানগুলো আমাদের ব্লাডে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে।যেমন- পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস,ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড এবং আরও অন্যান্য উপাদানের আধিক্য। দেখা যায় আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত পানি বের হতে না পেরে হাত পা সহ শরীরের কিছু কিছু অংশ ফুলে যাচ্ছে। যখনই আমাদের এ সমস্যাগুলো দেখা দেবে, তখনই বুঝতে হবে কিডনির রোগ দেখা দিচ্ছে।কিন্তু এসব থেকে কিডনিকে রক্ষা করা বা কিডনি ভালো রাখার উপায় কী? আমাদের শারীরিক কন্ডিশন মাথায় রেখে কিছু কাজ করলেই আমরা আসলে কিডনি ভালো রাখতে পারবো।
যাঁরা হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী, তাঁদের প্রথম কাজ হবে ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে রাখা। যদি ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে। যে খাবারগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে সেগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।মূলত বাইরের প্রসেস করা খাবার,রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন ডিশ এবং ক্যান যে সব স্যুপ অথবা ফিশ আমরা যেগুলো কিনি সেসব ধরনের খাবার,বিভিন্ন সস ও মেয়োনিজ অর্থাৎ যেগুলোতে লবণের ব্যবহার অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে থাকে সেগুলো এভয়েড করে খাওয়াদাওয়া করলেই কিডনি বেশ ভালো থাকবে।
কিডনি রোগী হলেই যে প্রোটিনের ব্যাপারে চিন্তিত হতে হবে এমনটা নয়। তবে অবশ্যই আপনাকে প্রোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে, যেটা আপনার শরীরে ভীষণ প্রয়োজন। শরীরের চাহিদার চেয়ে বাড়তি কোনও প্রোটিনজাতীয় খাবার আমাদের দেহে প্রবেশ করলে কিডনি ভালো থাকবেনা।তাই কিডনি ভালো রাখার উপায় হলো যা খাবেন,পরিমিত পরিমাণে খাবেন।
হুটহাট নিজের ইচ্ছেয় ওষুধ খেয়ে বিপদ না ডাকাই ভালো। বিশেষত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের অভ্যাস যদি থেকে থাকে এটা বন্ধ করুন,কিডনি ভালো রাখতে হলে একেবারেই উচিত নয় ব্যাথানাশক ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করা।
ডায়বেটিস বা ব্লাড প্রেশারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে কিংবা রক্তের কোলেস্টেরল যদি বেড়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তা কন্ট্রোলে রাখবেন।কিডনি বিকলের প্রধান কারণ এগুলোই তাই কিডনি ভালো রাখতে হলে এদের বিরুদ্ধেই আপনাকে যুদ্ধ করতে হবে।তাছাড়া রোগ সম্পর্কে সচেতনতাও কিডনি ভালো রাখার ভালো একটি উপায়।
কিডনির রোগের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন।ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, প্রস্রাব কমে যাওয়া,শরীরে পানি জমা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলেই ভালো চিকিৎসক দেখিয়ে চিকিৎসা নিন।
যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো এবং রোগের জটিলতার লক্ষণ সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিলে ভালো হয়।শুধু রোগী নন, রোগীর পরিবার কিংবা রোগীর সেবা দেন যিনি, তাঁদেরও বিষয়গুলো জানতে হবে।সতর্ক থাকুন।
কিডনি রোগীর খাবার
কিডনি রোগ যেহেতু বেশ জটিল একটি সমস্যা তাই কিডনি রোগীর খাবার নির্বাচন করতে হবে খুবই ভেবেচিন্তে। জেনে নিই কিডনি রোগীর খাবার কী কী হওয়া উচিত:

শর্করাজাতীয় খাবার বা কার্বোহাইড্রেট–
মূলত আমরা সবাই ই কম বেশি সহজাত ক্যালরির চাহিদা শর্করা থেকে মেটাই। বাঙালি তো এজন্য ই মাছে-ভাতে বাঙালি।এমন করেই কিডনি রোগীর যে ক্যালরি চাহিদা তার বেশিরভাগটাও এই কার্বোহাইড্রেটের মাধ্যমে পূরণ হয়।কিডনি রোগীদের ক্যালরির চাহিদা অবশ্য অন্যান্য রোগীদের তুলনায় বেশিই। প্রতি কেজি ওজনের জন্য রোগী ভেদে 30 থেকে 35 কিলোক্যালরি পর্যন্ত ধরক হয়।খাবারের অন্যান্য যেসব পুষ্টি উপাদান আছে সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম বলে কাবোর্হাইড্রেটকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত খাদ্যতালিকায়। ডায়াবেটিসে (টাইপ ১ ও টাইপ ২ উভয়ই)আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় শর্করার মাত্রা হিসেব করে ডায়েট রেডি করা হয়। ভাত, রুটি, ময়দা,সুজি,চিড়া,চালের গুঁড়া, চালের রুটি, সাগুদানা, সেমাই ইত্যাদি কিডনি রোগীর জন্য দারুণ সব কার্বোহাইড্রেট।খেতেও সুস্বাদু, সুস্বাস্থ্যও বজায় রাখে।
আমিষ বা প্রোটিন –
পাতে তুলে দেয়া শেষ রেডমিটও আমরা ছাড়তে চাইনা।সবাই কম বেশি রসনাবিলাসী।কিন্তু রসনাতৃপ্তির সাথে সাথে জানতে হবে তা ঠিক কতটুকু ও কী পরিমাণে খেলে আমরা আরও বেশিদিন সুস্থ থাকব তাও তো জানতে হবে?দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ এ প্রতি কেজি ওয়েটের জন্য 0.5 থেকে 0.8গ্রাম প্রোটিন হিসাব করুন।এটিই আপনার জন্য আদর্শ। ডাল, বাদাম, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি ইত্যাদি এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেনা তাই কম খাওয়াই ভালো।
তাহলে প্রোটিন কোথা থেকে আসবে? দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা আপনি ডিমের সাদা অংশ,নানারকম মাছ, মুরগির মাংস ও দুধ,দই এইসব থেকে হিসাব বেছে নিন।গরুর মাংস,খাসির মাংস, কলিজা, মগজ এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে যাবেন, তা না হলে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠবে কোলেস্টেরল।
শাক-সবজি –
পটাশিয়ামের আধিক্য থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য গাঢ় সবুজ শাক খুব একটা হেলদি বলা যাবেনা। তাই বলে একদম খাবেন না, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। অল্প পরিমাণে সপ্তাহে দু একদিন খাবেন।
শীত বলুন বা গ্রীষ্ম,বয়স্ক থেকে চাকরিজীবী জেনারেশন সবাই ই বাড়ি ফিরে মাছ ভাত আর সবজির একটা ভালো কম্বিনেশন খেয়ে শান্তি পেতে চান। কিডনি রোগীদেরও অনেকেই নিশ্চয়ই শাকসবজির নানা পদ খেয়ে অভ্যস্ত। তবে রোগ ধরা পড়ার পরে টমেটো, আলু, মিষ্টি আলু, কচু, ডাল ও বীজজাতীয় সবজি কম ই খেতে হবে। এগুলো রক্তে পটাশিয়াম ও ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে কিডনির ক্ষতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
গাজর,মূলো, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি সবজিগুলোর কোনোটাই অতিরিক্ত খাবেন না।তবে চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিংগা ইত্যাদি জলীয় সবজি হওয়ায় বেশ উপকারী তবে পরিমিত পরিমাণই খাবেন।
মসলা–
খাবারে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ব্যবহার করুন।এগুলো বরং কিডনির জন্য উপকারী বলা চলে। তাছাড়া ধনেপাতা, তুলসীপাতা, পুদিনাপাতা ও চিরতার রস খেতে পারেন।ধনেপাতা নানারকম ভর্তায় ব্যবহার করুন। তুলসীর চা,পুদিনার চাটনি খাবারে দারুণ মাত্রা আনে।
ফল –
ফলে অসংখ্য ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে। তবে কিডনি রোগ যেহেতু সেন্সিটিভ তাই সব ভালো উপাদান ই যে আপনার শরীরে ভালো প্রভাব ফেলবেতা নয়।তাই সাধারণত তিন থেকে চারটি ফল রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুসারে সীমিতভাবে সাজেস্ট করা হয়। আপেল,পাকা পেঁপে,পেয়ারা এইগুলো অল্প খেতে পারেন।নাশপাতি,বেদানা,আঙুরও চাইলে সপ্তাহে ১-২ দিন খাবেন।
তরলজাতীয় খাবার –
শরীরের আর্দ্রতা রক্ষার জন্য তরল প্রয়োজন তবে তা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।কিডনি রোগীদের জন্য এটি আবশ্যক।প্রতিদিন আপনি যতটুকু পানি, চা, দুধ, জুস বা তরল জাতীয় খাবার খান সেইসব পরিমাণ মিলিয়েই দৈনিক গ্রহণযোগ্য তরলের হিসাব করতে হয়। মানবদেহে ইডিমা, হিমোগ্লোবিন ও সোডিয়ামের মাত্রা, EGSR এসবের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ১ থেকে ১.৫ লিটার অথবা ২ লিটার পর্যন্ত তরল বরাদ্দ হয়।কেও কেও ভাবেন বেশি পানি খেলেই হয়তো কিডনি সুস্থ হয়ে যাবে যা একটি মারাত্মক ভুল ধারণা।
কিডনি রোগের ক্ষতিকর খাবার

Image by Freepik
ক্যাফেইন–
ক্যাফেইন শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই ই পরিচিত।সকালবেলা এক কাপ কফি অথবা বেড টি ছাড়া যেন সকালটাই কেমন বিরক্তিকর তাইনা?
কিন্তু জানেন কি,দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাফেইন গ্রহণের অভ্যাস আপনার কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়?ক্যাফেইন থেকে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র সমস্যা দেখা দেয়,যা কিডনির পানি শোষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে ফেলে।ক্যাফেইন রক্তপ্রবাহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। কিডনির জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ ক্ষতিকর।খুব জরুরি না হলে দু কাপের বেশি কফি খাবেন না।
কলা –
কী,চমকে গেলেন?এতদিন জেনে এসেছেন কলা ইন্সট্যান্ট এনার্জি দেয়।ডায়েটে এর অবদানও জানা আছে নিশ্চয়ই। কলা দেহের ক্যালসিয়াম ও শক্তির ঘাটতি পূরণ করে।কিন্তু যাদের কিডনির সমস্যা ধরা পড়েছে তারা এই খাবারটি খাবেন না বেশি।কলায় আছে অতিরিক্ত পটাশিয়াম যা আমাদের কিডনি বিকল করে। অতিরিক্তসোডিয়াম কিডনির জন্য ক্ষতিকর।তবে কলায় সোডিয়াম কম থাকলেও মাঝারি মাপের ১টি কলায় ৪২২ গ্রাম পটাশিয়াম আছে। তাই যথাসম্ভব কলা না খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
দুগ্ধজাত খাবার–
ছোটবেলা থেকেই আমাদের ঝোঁক থাকে দুধের তৈরি নানান খাবার যেমন পায়েস,মিষ্টি এসব নিয়ে।কিন্তু কিডনির সমস্যা দেখা দিলে আপনি কি সেই একই পরিমাণে খাবারগুলো খেতে পারবেন? না নিশ্চয়ই।
দুধ, ঘি, পনির, দই এসব দুগ্ধজাত খাবারে থাকে ক্যালসিয়াম এবং এগুলো মূত্রে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করে। একই সাথে খাবারগুলো কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকিরও কারণ। যারা ইতোমধ্যে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত, অবশ্যই এসব খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
আর যারা সুস্থ আছেন, তারাও চেষ্টা করুন এসব খাবার কম গ্রহণের।এ ধরনের খাবারে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ থাকে বেশি, যা হার্টের কোলেস্টেরল বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়।আর হার্টের যেকোনো সমস্যাই কিন্তু কিডনির সমস্যায় প্রভাব ফেলে। তেমনি কিডনির সমস্যা হার্টের সমস্যা বাড়ায় সহায়তা করে।কারণ হার্ট রক্ত পাম্প করে আর সেটিই রেচনতন্ত্রে যেয়ে পরিশোধিত হয় বলে এগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আরো পড়ুন- গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
লবণ–
প্রতিদিন খাবারে ব্যবহৃত যেকোনো একটা সাধারণ উপাদান বলুন? এক বাক্যে নিশ্চয়ই লবণের কথা বলবেন।এই লবণের প্রয়োজনীয়তা আসলেই অনেক বেশি। কিন্তু এই আবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান যখন অতিরিক্ত খাওয়া হয় তা কিডনিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করে ও কিডনির রোগ সৃষ্টি করে। লবণে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম। তবে এই সমস্যা এড়াতে খাবারে রান্নার সময় লবণ কম-বেশি করে নেবেন।
প্যাকেটজাত এবং ফ্রোজেন খাবারে এই নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।তাই বাইরের খাবার যথাসম্ভব এড়ানো উচিত। মানবদেহে প্রতিদিনের লবণেএ চাহিদা কত বলুনতো?মাত্র ১চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে দৈনিক। তাই কিডনি ভালো রাখার জন্য অতিরিক্ত লবণ না খেয়ে পরিমিত খাওয়ার অভ্যেস করুন।লবণ উচ্চরক্তচাপ বাড়িয়ে কিডনির সমস্যা বেগবান করে। ১৪০/৯০ এর উপরে ব্লাডপ্রেশার থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং কিডনি সুস্থ রাখতে হলে সবসময় ব্লাডপ্রেশার ১৩০/৮০ বা এর কম রাখতেই হবে।সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম একত্রে মিশে শরীরের ব্যালেন্স বজায় রাখে।তবে যা ই খাবেন পরিমিত খাওয়া আবশ্যিক।
কোমল পানীয় –
ঘরোয়া অনুষ্ঠান থেকে প্রশাসনিক প্রোগ্রাম,আড্ডা থেকে মিটিং সবখানেই এখন কোমল পানীয়ের জয়জয়কার।কোমল পানীয় বা অন্যান্য এনার্জি ড্রিংকস খাওয়াই এখন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো অনুষ্ঠানেই কোমল পানীয় না থাকলে সব যেন ম্লান।আবার দেখা যায় অনেকেই গরমের দিনে তৃষ্ণা পেলে পানির পরিবর্তে দোকান থেকে হিমশীতল এনার্জি ড্রিংকস বা কোমল পানীয় কিনে তীব্র রোদের মধ্যেই পান করতে আরম্ভ করেছেন।
কিন্তু এসব কোমল পানীয় যে আপনাএ কিডনির ব্যাপক ক্ষতি করে দিচ্ছে তা সম্পর্কেও সচেতন হওয়া উচিত। এর বদলে বরং পরিমিত পানি পান করা উত্তম। প্রতিদিন একজন মানুষের অন্ততপক্ষে ৮ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত বলেই আগে মনে করা হতো।কিন্তু এখন ধারণা পাল্টেছে।বরং পরিবেশ পরিস্থিতি, বয়স,তাপমাত্রা,আবহাওয়ার ধরন সবকিছু বিবেচনায় একমাত্র তৃষ্ণা পেলেই পানি খাওয়া সঠিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।অতিরিক্ত পানিও ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন।শরীর সতেজ হবে। পরিমাণ মতো পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। ধূমপান ও মদ্যপানের জন্যও কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে।বদভ্যাস যেমন ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে কিডনির ব্লাড সার্কুলেশন(রক্ত চলাচল) ধীরগতিতে হয় এবং এতে কিডনির কার্যক্ষমতা অতি দ্রুত কমতে থাকে।
কমলালেবু–
শীতের ফল কমলালেবু। ছোট বড় সকলেরই পছন্দ। শীতে কারো ফলের ঝুড়ি মানেই কমলা রং এর এই মনোহরা থাকেই।গরমে তো আছেই মাল্টা।তবুও এ ফল কিডনি রোগীদের জন্য অনেকাংশে বিপজ্জনক বলে ধরা দিয়েছে। অনেক মানুষই আছেন যারা খোসা ছাড়িয়ে কমলালেবু খান।ভিটামিন সি অবশ্যই শরীরের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ভিটামিন সি?অবশ্যই না। শরীরের উন্নতির লোভে পড়ে অতিরিক্ত কমলা লেবু খাওয়া উচিত নয় একদমই। কারণ, কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। এই পটাশিয়াম কিন্তু হজম হয়না কিডনি রোগীদের,বরং কিডনিতে গিয়েই জমা হয়ে থাকে।যেখানে শরীরে প্রতিদিন মাত্র ৫০০ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি হলেই যথেষ্ট সেখানে এর বেশি কেন গ্রহণ করবেন? প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে ও ইনফেকশন বাড়ায়।তাই পরিমিত খাবেন।
শাকসবজি –
শাকসবজি একদিকে যেমন উপকারী অন্যদিকে বেছে না খেলে এটিই মারাত্মকভাবে কিডনি রোগের ক্ষতিকর খাবার।রক্তে উপস্থিত পটাশিয়াম, ইউরিক এসিড, ফসফরাস ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে সবজি নির্বাচন করবেন আপনার জন্য। যেমন -অতিরিক্ত পিউরিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাকসবজি, পিচ্ছিল ও গাঢ় লাল রঙের সবজি,শাক এইগুলো এড়িয়ে যাবেন। কাঁচা সবজির সালাদ,ভেজিটেবল স্যুপ ইত্যাদি খাবেন না।কারণ কাঁচা সবজিতে সরাসরি হজমযোগ্য উপাদান গুলো ক্ষতিকর মাত্রায় থাকে।সরাসরি গ্রহণে আপনার কিডনি আক্রান্ত হতে সময় নেবেনা।
কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
১. কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দিলে আপনার উচিত পর্যাপ্ত পানি পান করা। কিডনির একটি অন্যতম রোগ হলো কিডনিতে পাথর হওয়া।ছোট আকারের পাথর দেখা দিলে পরিমাণমতো পানি পানের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। তবে বড় পাথরের ক্ষেত্রে এই ঘরোয়া পদ্ধতি কার্যকর না।
২. ভাতের পাতে লেবু থাকলে খাওয়াটা মন্দ হয় না,কী বলুন? এই লেবু ই কিন্তু কিডনি রোগের বেশ ভালো একটি সমাধান।তবে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে কারণ এতে ভিটামিন সি আছে। লেবুর রস কিডনির প্রদাহ কমায়।লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়ামজাত পাথর তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ছোট পাথরগুলোকে ভেঙে বের করে দেয়।কিডনির কাজ ত্বরান্বিত করে।প্রতিদিন সকালে পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ম করে পান করুন।দিনের যেকোনো সময়ে লেবুর রস পান করা যেতে পারে তবে খুব ই সামান্য পরিমাণে মেশাবেন।
৩. তুলসী পাতা দিয়ে চা খাওয়া ঠাণ্ডা লাগলে আমাদের অতি প্রিয় কাজ। কিডনি ভালো রাখতে এই পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতায় আছে অ্যাসিটিক এসিড যা কিডনির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। প্রতিদিন অন্তত দুবার তুলসীর রস খেতে পারেন।আর যদি তুলসীর পাতার রস অসহনীয় লাগে তাহলে গ্রিন টি অথবা সাধারণ চা করেও পান করতে পারেন।
৪. সূর্যের আলোও যে ঘরোয়া চিকিৎসা হতে পারে,কি আশ্চর্য তাইনা? সরাসরি শরীরে লাগলে আমাদের চামড়ার কোষে কধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে।এর ফলে ত্বকের নিচের স্তরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।ভিটামিন ডি এর কাজ কী?শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হাড়ের ক্ষয় পূরণ করে, ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে এবং এছাড়াও শরীরে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে।
মূলত শেষ পয়েন্টটিই আমাদের কিডনি রোগের জন্য ভালো। ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখা জরুরি যা কিডনির জন্য অতীব প্রয়োজন। সারাদিন মিলিয়ে যদি মাত্র ১৫ মিনিট আপনি রোদে থাকেন তাহলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি শরীরে তৈরি হয়ে যায় আর কিডনিও অতিরিক্ত কাজ করা থেকে সামান্য বিশ্রাম পায়।ভিটামিন ডি এর মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় কমে গেলে কিডনি রোগ, ডায়বেটিস, ক্যান্সার এবং হৃদরোগ সহ মারাত্মক জীবনসংহারী অনেক রোগ সৃষ্টি হতে পারে।দিনে ৯০০ টি সেকেন্ড প্রকৃতির কোলে রোদে অবস্থান করলে ক্ষতি কী?
৫. ডালিমকুমারের গল্পের কথা মনে আছে?তার সজীবতায় সৃষ্টি হয়েছিল সোনার ডালিম গাছ।তেমনই কিডনি রোগের জন্যেও ডালিম যেন রুপকথার মতো ই জাদুকরী।ডালিমের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এলিমেন্ট কিডনি সুস্থ রাখতে এবং পাথর ও অন্যান্য টক্সিনকে দূর করতে সহায়তা করে । চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সারাদিনে কতবার ডালিমের জুস পান করবেন তা বুঝে নিন।
ঘরে বসে অনলাইনে আয় করার সহজ উপায়
৬. কালিজিরার কৌটো কম বেশি আমরা দেখেছি।এক মুঠো কালিজিরা খেয়ে ঝাঁঝ নেয়া কতজনের ছোটবেলার খেলা।আর বড়বেলায় এসে এই কালিজিরাই যেন দারুণ একটি সমাধান কিডনি রোগের।একটি গবেষণায় দেখা যায়, কালিজিরার বীজ কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন গঠনে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দিয়ে কিডনি সুস্থ রাখে।২৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে হাফ চা-চামচ শুকনো কালিজিরা বীজ নিয়ে ভালো মতো মিশিয়ে দিনে দু বার করে পান করবেন।
তবে এগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেয়া ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
৭.আপেল সিডার ভিনিগার রূপচর্চায় বেশিই ব্যবহার হয়।কিন্তু কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসারও অন্যতম উপাদান এটি।এতে থাকা অ্যাসিটিক এসিড কিডনির পাথর দূর করে এবং ব্যথা কমায়। আপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে পান করবেন তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়।একদিনে ১২-১৬ চামচের বেশি খাবেন না একদমই।
৮. মেথি বীজ আমরা চুলে লাগাতেই বেশি অভ্যস্ত। তবে খেলেও উপকার বই অপকার হবেনা। কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য মেথি দ্রবণ ব্যবহৃত হয়। বীজগুলো কিডনিতে জমা হয়ে থাকা ছোট ছোট পাথর শুধু কমিয়েই ফেলে না বরং কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে। এক কাপ ফোটানো পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ শুকনো মেথি বীজ মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন পান করুন। সারা রাতও মেথি ভিজিয়ে রাখতে পারেন সকালে খাওয়ার জন্য।
কিডনি রোগের বৈজ্ঞানিক সমাধান হলো ডায়ালাইসিস। রক্ত বিশুদ্ধকরণের এই পরীক্ষায় দূষিত রক্ত পরিশ্রুত করে ডায়ালাইসিস মেশিনের মাধ্যমে পুনরায় দেহে প্রবেশ করানো হয়।তবে প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। কিডনি নষ্ট হলে এটি করা হয় তবে টিস্যু ম্যাচ হলে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।এতে অনেক রোগী বেঁচে যান।
উপরোক্ত তথ্যাবলী কাজে লাগিয়ে আপনি নিশ্চয়ই কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে সচেতন হয়েছেন।ডাক্তারের পরামর্শে হেলদি লাইফস্টাইল ফলো করুন এবং সুস্থ থাকুন।